মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল আঘাত হেনেছে ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার এবং ইয়েমেনে। গাজা যুদ্ধের মধ্যেই এই হামলা সীমান্তের অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
কাতারে প্রথমবারের হামলা
মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতৃত্বের বৈঠক চলাকালে ইসরায়েল টার্গেটেড এয়ারস্ট্রাইক চালায়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। হামলায় প্রাণ হারান হামাসের শীর্ষ নেতা খালিল আল-হাইয়ার ছেলে, তার অফিসের পরিচালক, তিনজন দেহরক্ষী এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে হামাসের মূল নেতৃত্ব বেঁচে গেছে।
দোহায় বিস্ফোরণে কূটনৈতিক এলাকা কেঁপে ওঠে এবং ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। কাতার এটিকে দেশের সার্বভৌমত্বে সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছে। উল্লেখযোগ্য হলো—এটাই প্রথমবার ইসরায়েল কাতারে হামলা চালিয়েছে।
গাজায় গণহত্যা অব্যাহত
গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ অব্যাহত আছে। সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনে অন্তত ১৫০ জন নিহত এবং ৫৪০-এর বেশি আহত হয়েছেন। ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের কারণে শিশু ও নারীরাও প্রাণ হারিয়েছেন।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলা এই যুদ্ধ ইতিমধ্যেই ৬৪,৬০০-এর বেশি মানুষের জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে অগণিত মানুষের খোঁজ মেলেনি। গাজা নগরীর উঁচু ভবন, হাসপাতাল এবং অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে, মানুষ বারবার ঘরছাড়া হচ্ছে।
লেবাননে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও হামলা
গত নভেম্বরে অস্ত্রবিরতি স্বাক্ষরিত হলেও ইসরায়েল লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে পূর্ব লেবাননের বেকা ও হারমেল জেলায় বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন।
পরের দিন বারজা গ্রামের প্রবেশপথে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আহত হন হিজবুল্লাহর এক সদস্য। সীমান্তে এখনও পাঁচটি আউটপোস্টে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান করছেন, যা যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করছে।
সিরিয়ায় বিমান হামলা
সোমবার গভীর রাতে সিরিয়ার হোমস ও লাতাকিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে “সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন” আখ্যা দিয়েছে।
ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েল সিরিয়ায় শতাধিক হামলা চালিয়েছে। শুধু এ বছরই ৮৬টি বিমান হামলা ও ১১টি স্থল আক্রমণে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। গোলান মালভূমির নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলও ইসরায়েল দখল করেছে।
তিউনিসিয়ার উপকূলে গাজা ফ্লোটিলা লক্ষ্যবস্তু
সোমবার রাতে তিউনিসিয়ার সিদি বউ সাঈদ বন্দরে নোঙর করা “ফ্যামিলি বোট” নামে গাজা ফ্লোটিলার মূল জাহাজে ড্রোন হামলা হয়। আগুন নেভানো গেলেও কিছু অংশে ক্ষতি হয়।
পরের রাতে আরেকটি জাহাজ “আলমা”ও ড্রোন হামলার শিকার হয়। দুটিতেই কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ফ্লোটিলায় ৪৪টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছিল, যারা গাজার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছিল।
ইয়েমেনে বিমান হামলা
বুধবার ইসরায়েল ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তু ছিল হুথি বাহিনীর ঘাঁটি এবং সানা বিমানবন্দর। এটি এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় হামলা। গত ২৮ আগস্ট সানায় হুথি সরকারের বৈঠকেও ইসরায়েলি হামলায় হুথি প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন।
মাত্র তিন দিনে ছয় দেশকে আক্রমণ করে ইসরায়েল প্রমাণ করেছে যে গাজা যুদ্ধ সীমান্ত পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বৃহৎ ভূ-রাজনৈতিক অগ্নিগোলকে রূপ নিয়েছে। এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অনেকেই ছিলো আলোচনা ও মধ্যস্থতার অংশীদার। ফলে এ পরিস্থিতি শুধু গাজা নয়, পুরো অঞ্চলের শান্তি প্রক্রিয়াকেই অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।