নেপালে তরুণদের দুই দিনের বিক্ষোভ শেষে রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ধীরে ধীরে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগে রূপ নেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। দুই দিনের সহিংসতায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া ‘জেন-জি’র তরুণেরা দাবি করেছেন, তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে ছিলেন। তাদের আন্দোলন সুযোগসন্ধানীদের হাতে ছিনতাই হয়ে গেছে। তারা শান্তিপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবর্তনের দাবিতে আছে।

বুধবার কাঠমান্ডু বিমানবন্দর আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। শহরের পরিবেশ থমথমে ছিল, কারণ কারফিউর কারণে অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে ছিলেন। পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে এখনও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে এবং নতুন সহিংসতা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় কিছু তরুণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিষ্কার করতে বের হয়েছেন। ১৪ বছর বয়সী কসাং লামা বলেন, “নেপাল দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিতে জর্জরিত। এখন দেশ পরিবর্তনের সময় এসেছে।” ২৪ বছর বয়সী পরশ প্রতাপ হামাল বলেন, “নেপালে স্বাধীন রাজনৈতিক নেতার প্রয়োজন।” ৩৬ বছর বয়সী রাকেশ নিরুলা মনে করেন, এই বিপ্লবের ফলে মানুষের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে এবং নেতারা শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাবে।

তবে অনেক মানুষ সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন। ললিতপুরের উদ্যোক্তা প্রভাত পাওডেল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের মতো সরকারি ভবন পুড়িয়ে দেওয়ায় আমরা হতবাক।” সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাঁরা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা বিবৃতিতে বলেছেন, আন্দোলন অহিংস ছিল ও থাকবে। তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি কারফিউ কার্যকর করার জন্য সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
নেপালে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতি, বেকারত্ব, বৈষম্য এবং রাজনীতিবিদদের স্বজনপ্রীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল। সম্প্রতি সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষোভ চরমে পৌঁছায় এবং তরুণরা বিক্ষোভে নামে।

