ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহ ইঙ্গিত দিয়েছেন, হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে আরও হামলা চালানো হতে পারে। গত সপ্তাহে কাতারে সংঘটিত হামলার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে, তাতেও তিনি দমে যাননি। তার ভাষায়, হামাস নেতারা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন, তারা “কোনও রকম নিরাপত্তা বা রেহাই” পাবেন না।
জেরুজালেমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহ বলেন, প্রতিটি রাষ্ট্রের অধিকার আছে তার সীমানার বাইরেও আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার। তবে কাতারের মতো মার্কিন ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশে হামলা চালানোয় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ওয়াশিংটন এমনকি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলার সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে হয়নি। নেতানিয়াহও সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরাই করেছি, নিজেরাই করেছি।”
হামাস দাবি করেছে, কাতারে চালানো সেই হামলায় ছয়জন নিহত হলেও শীর্ষ নেতারা অক্ষত আছেন। তবে আন্তর্জাতিকভাবে এটি আঘাত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে, কারণ কাতারই এতদিন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছিল। কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।
রুবিওর সফর ও আরব বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহ-রুবিওর এই বৈঠকের সময় আরব নেতারা কাতারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সম্মেলন করছিলেন। কাতারের প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি প্রয়োগ করছে এবং এ ধরনের হামলার জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত।
রুবিও অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো তার উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে “শক্তিশালী সম্পর্ক” বজায় রেখেছে। তবে ইসরায়েলের এই কাতার হামলা অঞ্চলে মার্কিন অবস্থানকে বিব্রত করেছে, সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই।
গাজায় নতুন অভিযানের প্রস্তুতি
এদিকে গাজার পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ইসরায়েলি সেনারা পশ্চিমাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাজার উত্তরাংশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এলাকা ছেড়েছেন, তবে এখনো লাখো মানুষ সেখানেই রয়ে গেছেন।
অনেকে বলছেন, দক্ষিণ গাজাও নিরাপদ নয়, কারণ সেখানে একইভাবে বিমান হামলা চলছে। কেউ কেউ চেষ্টা করেছিলেন দক্ষিণে গিয়ে তাঁবু গাড়তে, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে আবার গাজা সিটিতেই ফিরে আসেন।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির আলোচনায় চাপ বাড়ছে
এই বৈঠকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট হলো আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও বেলজিয়ামের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
এটি ইসরায়েলের ভেতরে বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে। ডানপন্থী অংশ বলছে, পশ্চিম তীর দখল করে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। নেতানিয়াহ ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, “এখানে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না, এ ভূমি আমাদের।”
সম্প্রতি ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বিতর্কিত ই-ওয়ান বসতি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, যা কার্যত অঞ্চলটিকে দুই ভাগ করে দেবে। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ পশ্চিম তীরের চার-পঞ্চমাংশ সংযুক্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী এবং ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি পাশাপাশি বাস করছে—যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত।
রুবিও জেরুজালেম সফরে নেতানিয়াহর সঙ্গে পশ্চিম দেয়াল পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে ঐতিহ্য অনুযায়ী একটি নোট লিখে প্রাচীরের ফাঁকে রেখে দেন। সোমবার তিনি বিতর্কিত সিটি অব ডেভিড পার্কও ঘুরে দেখেন, যেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি বাড়ির নিচে সুড়ঙ্গ খনন করে প্রাচীন রোমান যুগের রাস্তা উন্মোচনের দাবি করছে।
ফিলিস্তিনিরা বলছে, এসব প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যক্রমের আড়ালে মূলত তাদের জমি দখল করার রাজনীতি চলছে।