ভারতে নেপালের মতো জেন-জি আন্দোলন দেখা দিতে পারে। এমন মন্তব্য করেছেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির কার্যনির্বাহী সভাপতি কে টি রামা রাও। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভারতের তরুণ প্রজন্মও নেপালের মতো প্রতিবাদে নামতে পারে।
এনডিটিভির ‘যুবা কংক্লাভ’-এ বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নেপালে যখন জেন-জি আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন অনেকেই সেটিকে অবহেলা করেছিলেন। মিডিয়া বলেছিল, তারা শুধু ইন্টারনেট বন্ধের কারণে প্রতিবাদ করছে। কিন্তু আসলে বিষয়টি ছিল তরুণ প্রজন্মের নিজেদের ভবিষ্যতের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই। কে টি আর বলেন, “সম্প্রতি নেপালে যা ঘটেছে তা একেবারেই গণতন্ত্রের দমন এবং তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা। প্রথমে মিডিয়াও এটিকে হালকাভাবে নিয়েছে। তবে বিষয়টি কেবল ইন্টারনেটের সমস্যার সঙ্গে সীমাবদ্ধ ছিল না। মূলত এটি ছিল তরুণদের নিজেদের ভবিষ্যতের স্বার্থ রক্ষার লড়াই।”
ভারতেও কি এমন আন্দোলন সম্ভব? সরাসরি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যদি সরকার ব্যর্থ হয় এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পারে, তাহলে কেন সম্ভব নয়? হ্যাঁ, সম্ভব।” দর্শকদেরও একই প্রশ্ন করা হলে, অনেক তরুণ ‘না’ বলে উত্তর দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি যোগ করেন, “এখনো সময় আছে। পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটি দেখার বিষয়। তবে তরুণরা সচেতন হলে, ভারতেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে।”
‘ইউভা অ্যান্ড দ্য আর্ট অব রিইনভেনশন’ শীর্ষক সেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি আরও বিশদভাবে তুলে ধরেন, কীভাবে তার দল এবং তিনি তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জেন-জির প্রকৃত চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “জেন-জি মূলত তরুণ, সাহসী এবং আকাঙ্ক্ষী। তারা ‘ডু ইট ইয়োরসেল্ফ’ প্রজন্ম। তারা নিজেরাই কাজ করতে পছন্দ করে। নতুন ধারণা এবং পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়। তারা কল্পনাশীল, উদ্ভাবনী এবং প্রাণবন্ত। আমি বিশ্বাস করি, তেলেঙ্গানাও ধীরে ধীরে একটি জেন-জি রাজ্য হিসেবে গড়ে উঠছে।”
কে টি আর জেন-জির নেতৃত্ব এবং সামাজিক সচেতনতার উদাহরণও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “হায়দরাবাদে যখন তেলেঙ্গানা সরকার প্রায় ৪০০ একর বনভূমি বিক্রি করতে চেয়েছিল, তখন জেন-জি তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে। হায়দরাবাদ সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে তারা সরকারের পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সক্রিয় অংশগ্রহণ ও চাপের ফলে সুপ্রিম কোর্টও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অবশেষে সেই বনভূমি রক্ষা পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভিজম যথেষ্ট নয়। জেন-জি প্রজন্মকে এখনই সুযোগ নিতে হবে। সময় নষ্ট করা মানে পিছিয়ে থাকা। পৃথিবী ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে কিন্তু ভারত আরও যুবক। তাই নতুন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে, সাহসী হতে হবে। এই প্রজন্ম ভবিষ্যতের নিয়ম ও কাঠামো নতুনভাবে তৈরি করবে। পুরোনো নিয়মের কপি যথেষ্ট নয়।
একটি প্রশ্নের উত্তরে কে টি আর বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে রাজনীতিবিদরা সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন, যা আগে সম্ভব ছিল না। রাজনীতির ধারা ইতিমধ্যে অনেক বদলেছে এবং আগামী দশকে আরও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তরুণরা আরও সক্রিয়, সমৃদ্ধ এবং উদ্যোগী হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি জেন-জির প্রভাব কেবল রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থা, ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার, নাগরিক অংশগ্রহণ, পরিবেশ ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে তারা সরাসরি প্রভাব ফেলছে। কে টি আর মনে করিয়ে দেন, এই প্রজন্ম শুধু আন্দোলন তৈরি করছে না, তারা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্ভাবনী ধারণা এবং কার্যকরী সমাধানও দিচ্ছে।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জেন-জি প্রজন্মের শক্তি মূলত তাদের ডিজিটাল দক্ষতা, সামাজিক সচেতনতা এবং উদ্ভাবনী মনোভাব থেকে আসে। তারা কেবল সমালোচনা করে না, সমাধানও প্রদান করে। উদাহরণ হিসেবে হায়দরাবাদের বনভূমি সংরক্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে, তারা কিভাবে সামাজিক আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করতে পারে। এছাড়া তারা প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
কে টি আর এই প্রজন্মকে নতুন দৃষ্টিকোণ ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “জেন-জি শুধুমাত্র প্রতিবাদ করে না, তারা সমাজ ও রাজনীতিতে প্রকৃত পরিবর্তন আনে। তারা পুরনো নিয়মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে নতুন ধারণা এবং কর্মপন্থা তৈরি করে।”

