কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গতকাল শনিবার তাঁর মার্কিন ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
গত শুক্রবার নিউইয়র্কের রাস্তায় ফিলিস্তিনপন্থী একটি বিক্ষোভে অংশগ্রহণের সময় পেত্রো মার্কিন সেনাদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ না মানার আহ্বান জানান। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, তাঁর ভিসা বাতিল করা হবে।
গুস্তাভো পেত্রো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “এখন থেকে আমার যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নেই; তবে আমি তাতে কোনো পরোয়া করি না। আমার ভিসার প্রয়োজন নেই। আমি শুধু কলম্বিয়ার নাগরিক নই, ইউরোপেরও নাগরিক। আমি নিজেকে বিশ্বের একজন স্বাধীন মানুষ মনে করি।”
তিনি আরো বলেন, “গাজায় ইসরায়েলের কর্তৃক জাতি হত্যার নিন্দা জানানোর কারণে আমার ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে না।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলার কারণে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত উপত্যকায় ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একাধিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতিকে জাতি হত্যার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরের বাইরে ফিলিস্তিনপন্থী সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে পেত্রো বিশ্বব্যাপী একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠনের আহ্বান জানান। তার বক্তব্যে বলা হয়, এই বাহিনীর মূল কাজ হবে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা। এছাড়া মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মানুষের দিকে অস্ত্র তাকাবেন না। মানবতার নির্দেশ মেনে চলুন।”
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, বেপরোয়া ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে পেত্রোর ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।
জবাবে কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেখানে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মত প্রকাশের অধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়, সেখানে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ভিসা বাতিল করা আন্তর্জাতিক চেতনার পরিপন্থী।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টানাপোড়েনপূর্ণ হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে পেত্রো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত মানুষদের দেশে ফেরত পাঠানো ফ্লাইট বন্ধ করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়। পরে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়।
চলতি বছরের জুলাইয়ে পেত্রো অভিযোগ করেন, মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁর দেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছেন। এরপর উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। তবে ওয়াশিংটন এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালে পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং দেশটিতে কয়লা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেন।