ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছে একটি পুরো পরিবার। স্থানীয় প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, দম্পতি ও তাদের দুই ছোট্ট ছেলে—মাত্র চার ও ছয় বছর বয়সী শিশু—সবাই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে।
সুমি অঞ্চলের প্রধান ওলেহ গ্রিহোরভ জানান, গতরাতে চেরনেচচিনা গ্রামে একটি আবাসিক ভবনে সরাসরি ড্রোন আঘাত হানে। ভোরে উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে চারজনের মরদেহ বের করে আনেন। তিনি বলেন, “একটি পুরো পরিবারের মৃত্যু—এ এক শোক যা আমরা কখনো ভুলব না, ক্ষমা করব না।”
ইউক্রেনের জরুরি সেবা সংস্থা (DSNS) জানায়, ওই গ্রামে অন্তত দুটি বাড়ি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। সংস্থাটি হামলার পর অগ্নিকাণ্ড নেভানোর ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জ্বলতে থাকা ঘরের ভেতর প্রবেশ করছেন।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া এক রাতে ৬৫টি ড্রোন ছুড়ে মারে। এর মধ্যে ৪৬টি গুলি করে নামানো সম্ভব হলেও অন্তত ১৯টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
অন্যদিকে রুশ সেনারা দাবি করেছে, তারা নিজ ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ৮১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে রাশিয়া কোনো হতাহতের খবর দেয়নি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া নিয়মিত শত শত ড্রোন ও ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণ চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনের এই হামলা ঠেকাতে কিয়েভ দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চাইছে। একই সঙ্গে তারা এমন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চাইছে যা রাশিয়ার অভ্যন্তরে বড় শহরগুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম হবে।
ইউক্রেনের যুক্তি, রাশিয়ার ভেতর শিল্প ও অস্ত্র কারখানায় আঘাত হানতে পারলেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করা যাবে।
গত সপ্তাহে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ইউক্রেনের চাওয়া দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি ওয়াশিংটন বিবেচনা করছে। এই অস্ত্র পেলে ইউক্রেনের হাতে থাকবে মস্কোসহ রাশিয়ার বড় শহরগুলোতে আঘাত হানার ক্ষমতা।
মঙ্গলবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ঘোষণা দেন, ইউক্রেনকে ড্রোন সরবরাহে ২ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করা হবে। তার ভাষায়, “এতে ইউক্রেন আরও শক্তিশালী হবে, এবং ইউরোপও এই প্রযুক্তির সুফল ভোগ করবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউরোপের নেতারা যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালালেও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো কোনো সমঝোতায় রাজি নন। কিয়েভ ও তার মিত্রদের অভিযোগ, পুতিন কেবল সময়ক্ষেপণ করছেন, যদিও যুদ্ধে তার সেনারা বিশাল ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।