ইউরোপের নতুন “মোরার নীতি” পরিকল্পনা রাশিয়ার সংরক্ষিত সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে $১৬৪ বিলিয়নের ঋণ দেওয়ার কথা বলছে। এই ঋণ যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে অস্ত্র ক্রয় এবং দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপের মধ্যে আইনি ও কৌশলগত দ্বিধা আছে।
মোরার নীতির মূল ধারণা
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন প্রথম এই পরিকল্পনা উত্থাপন করেন। ইউক্রেনে মার্কিন অর্থ সাহায্য কমে যাওয়ায় ইউরোপকে অর্থায়নের শূন্য পূরণ করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফ্রোজেন রাশিয়ান সম্পদকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে ইউক্রেনকে ঋণ দেওয়া হবে। ঋণ ফেরত নেওয়া হবে যুদ্ধ reparations বা ক্ষতিপূরণ থেকে।
ভন ডার লেইন বলেন, “ঋণের একটি অংশ ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পে ব্যবহার হবে, যাতে অস্ত্র ক্রয় ইউরোপেই হয়।”
রাশিয়ার ফ্রোজেন সম্পদ
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে প্রায় $৩০০ বিলিয়ন রাশিয়ান সম্পদ ফ্রোজেন রয়েছে। এর মধ্যে $২৪৬.৯ বিলিয়ন ইউরোপে রয়েছে, যার বেশিরভাগ নগদ।
আইনি ও অর্থনৈতিক সমস্যা
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি দেশের সম্পদ কেবল সাময়িকভাবে স্থগিত করা যায়; তা স্থায়ীভাবে দখল করা যায় না। ইউরোপ যদি এই সম্পদ ব্যবহার করে ঋণ দায়িত্ব নেয়, তবে তা রাশিয়ার সার্বভৌম অধিকার লঙ্ঘন করবে।
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডে ভেভার বলেছেন, “যদি আমরা এই অর্থ ব্যবহার করি, এর ঝুঁকি সবার কাঁধে ভাগ করতে হবে।”
ডাচ প্রধানমন্ত্রী এবং লাক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী উভয়ই আইনি ও আর্থিক ঝুঁকির কারণে সতর্ক। তারা জানাচ্ছেন, যদি রাশিয়া যুদ্ধ শেষে ক্ষতিপূরণ না দেয়, তাহলে ঋণ ফেরত পাওয়া কঠিন হবে।
মার্কিন সাহায্য কমে যাওয়ায় ইউক্রেনকে প্রায় $১০০ বিলিয়নের বার্ষিক সহায়তা প্রয়োজন। ইউরোপ যদি এগিয়ে না আসে, ইউক্রেনের হারার ঝুঁকি এবং ইউরোপে শরণার্থীর চাপ বাড়বে।
রাশিয়ার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া
ক্রেমলিন এই পরিকল্পনাকে “চুরি” বলে অভিহিত করেছে। প্রেস স্পিকারের দিমিত্রি পেস্কভ বলেছেন, “যারা সম্পদ দখল করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে আইনগত পদক্ষেপে রাশিয়াকে নিজের সার্বভৌম ইমিউনিটি ত্যাগ করতে হবে, যা বছর ধরে সময় নেবে।
মোরার নীতি বাস্তবায়িত হলে ইউক্রেনকে বড় আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে। তবে আন্তর্জাতিক আইন, ঋণ পুনঃপ্রাপ্তি এবং রাশিয়ার সম্ভাব্য প্রতিশোধের ঝুঁকি এটিকে জটিল ও বিতর্কিত বিষয় করে তুলেছে। ইউরোপের নেতাদের চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে এই পরিকল্পনাকে কার্যকর এবং নিরাপদভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।