ভেনেজুয়েলার সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। গতকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নরওয়ের নোবেল কমিটি বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পাওয়ার পর ‘কোডপিংক’ লাতিন আমেরিকা ক্যাম্পেইন কর্ডিনেটর মিচেলে এলনার ‘কমন ড্রিমস’-এ একটি মতামত কলামে লিখেছেন, “মারিয়ার মতো ডানপন্থিরা যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতে, তখন শান্তির প্রকৃত মানে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
মাচাদোর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে—
- মারিয়া ২০০২ সালের ভেনেজুয়েলার সামরিক অভ্যুত্থানে সহায়তা করেছিলেন। যেটি স্বল্প সময়ের জন্য একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছিল। এছাড়া তিনি কারামোনা ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। যেটি রাতারাতি ভেনেজুয়েলার সংবিধান এবং সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল।
- ভেনেজুয়েলর সরকার উৎখাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন। নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ভেনেজুয়েলাকে ‘স্বাধীন’ করতে বিদেশি সেনাদের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকদিন আগে ভেনেজুয়েলায় হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। যেটিকে উৎফুল্লভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন মারিয়া। এছাড়া ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ‘মাদক কারবারিদের’ রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েনকে সমর্থন করেছেন তিনি। মারিয়া বলেছেন তিনি ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান।
- ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়েছেন মারিয়া মাচাদো। যদিও তিনি জানেন এ নিষেধাজ্ঞার ফল ভোগ করবে গরীব, অসুস্থ ও কর্মজীবী মানুষরা।
- এছাড়া ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কথিত ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠন করেছিলেন তিনি। যেই সরকারের প্রেসিডেন্ট নিজেই নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন।
- মারিয়া কারিনো মাচাদো জানিয়েছেন, কখনো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি দেশটির ইসরায়েলি দূতাবাস ফিলিস্তিনের দখলকৃত জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন। তিনি দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন। যে ইসরায়েল নিজেই একটি বর্ণবাদী সরকার। তারা আত্মরক্ষার অজুহাতে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। যা থেকে হাসপাতালও বাদ যায়নি।
- আর এখন তিনি ভেনেজুয়েলার তেল, পানি এবং অবকাঠামো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন। ১৯৯০ সালের দিকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে লাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ দেশের পরিস্থিতি শুধু খারাপই হয়েছিল।
- এছাড়া ২০১৪ সালে ভেনেজুয়েলাজুড়ে ‘লা সালিদা’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেন। বিশ্বব্যাপী এটি শান্তিপ্রিয় হিসেবে দেখালেও; আন্দোলনটি ছিল সহিংস।
২০১৪ সালে তিনি ‘লা সালিদা’ আন্দোলন শুরু করেন। যদিও এটি আন্তর্জাতিকভাবে শান্তিপ্রিয় হিসেবে দেখানো হয়েছিল, আন্দোলনটি সহিংস ছিল।
জর্ডানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রোয়া নিউজ জানিয়েছে, নোবেল জয়ের পর মারিয়া একটি ইসরায়েলি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, “ইসরায়েলের সমর্থনে দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে।”
এছাড়া ২০১৮ সালে তিনি ইসরায়েলকে চিঠি লিখে ভেনেজুয়েলার সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।
নোবেল জয়ের পর মারিয়া তার পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মারিয়ার সুসম্পর্ক রয়েছে। ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর তাকে ভেনেজুয়েলার সরকার গ্রেপ্তার করলেও- ট্রাম্প মুক্তির জন্য সামাজিক মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সূত্র: কমন ড্রিমস, বিবিসি, রোয়া নিউজ