মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন, তিনি লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালাতে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য দেন। এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস খবরটি প্রকাশ করে জানায়, ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
ট্রাম্প বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভেনেজুয়েলার নৌযানের ওপর মার্কিন হামলা ও সেখানে সেনা মোতায়েনের পর এখন স্থল আক্রমণের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।
হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক জানতে চান, “আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় পাঠাতে অনুমোদন দিলেন?”
জবাবে ট্রাম্প বলেন, “দুটি কারণেই অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারের বন্দীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিপুল পরিমাণ মাদক ভেনেজুয়েলা থেকে সমুদ্রপথে যুক্তরাষ্ট্রে আসছে। আমরা তা ঠেকাতে সমুদ্র ও স্থল উভয়পথে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সাংবাদিক আরও জানতে চান, সিআইএ কি মাদুরোকে সরানোর ক্ষমতা পেয়েছে? ট্রাম্প বলেন, “এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে ভেনেজুয়েলা এখন চাপের মুখে আছে।”
ওয়াশিংটনের দাবি, গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার জলসীমায় অন্তত পাঁচটি হামলা চালিয়েছে মাদকবাহী নৌযানের ওপর। এসব হামলায় ২৭ জন নিহত হয়। সর্বশেষ হামলাটি হয় মঙ্গলবার সকালে। ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “আজ সকালে ভেনেজুয়েলার উপকূলে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত একটি নৌযানের ওপর প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছি।”
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোনো হামলার ক্ষেত্রেই মাদকবাহী নৌকার প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। প্রথম হামলাটি হয় ২ সেপ্টেম্বর, যেখানে ১১ জন নিহত হন। পরবর্তী তিনটি হামলায় আরও ১৬ জন প্রাণ হারান।
বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “আমরা আফগানিস্তান, ইরাক বা লিবিয়ার মতো ব্যর্থ যুদ্ধ চাই না। সিআইএ–নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানও চাই না। লাতিন আমেরিকা এসব প্রত্যাখ্যান করছে।”
ভেনেজুয়েলার সরকার বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিবর্তনের অজুহাতে ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।
নেদারল্যান্ডসের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সালভাদর সান্তিনো রেজিলমে বলেন, “সমুদ্রপথে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের আগে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জীবনরক্ষার অধিকার ও প্রয়োজনীয়তার নীতি মানা জরুরি।”
মার্কিন সাংবিধানিক আইনজীবী ব্রুস ফাইন বলেন, “আত্মরক্ষার পরিস্থিতি ছাড়া বিদেশে সামরিক পদক্ষেপ নিতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। ভেনেজুয়েলায় হামলা সাংবিধানিক নয়।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৩ সালের ওয়ার পাওয়ারস রেজ্যুলেশন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হয় এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতে হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো ভোট বা অনুমোদন হয়নি।
রাজনীতি বিশ্লেষক কার্লোস পিনা বলেন, “ট্রাম্পের এই ঘোষণা মাদুরোর ক্ষমতাকে আরও দৃঢ় করতে পারে। তিনি আবারও মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লাতিন আমেরিকার ঐক্য জোরদার করেছেন।” তবে তিনি সতর্ক করেন, “এই পরিস্থিতি ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে আরও কঠোর দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা বাড়াবে।”