নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিজয় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দুনিয়ায় নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও গুরুত্ব বহন করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে রিপাবলিকান পার্টির শক্তিশালী আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও মামদানির জয় এই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছে। সিটি নির্বাচনে তিনি ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট নেতা ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের বাধা, অপপ্রচার ও হুমকির মধ্যেও এই জয় নিশ্চিত করেছেন।
তার বিজয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে অনেকেই ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দেখতে চান।
কিন্তু সংবিধানগত কারণে মামদানির প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১ম সেকশন, ২য় ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান, তাকে অবশ্যই জন্মসূত্রে (ন্যাচারাল বর্ন সিটিজেন) যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। অর্থাৎ, জন্মগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নয় এমন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
জোহরান মামদানির জন্ম ১৯৯১ সালে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়। তার মা মীরা নায়ার এবং বাবা মাহমুদ মামদানির সঙ্গে ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে তিনি কিছু সময় দক্ষিণ আফ্রিকায়ও অবস্থান করেছেন। যদিও মামদানি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, তিনি ন্যাচারাল বর্ন সিটিজেন নন। ২০১৮ সালে নাগরিকত্ব অর্জন করেন। ফলে সংবিধান অনুযায়ী তিনি কখনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সংবিধানের এই ধারা নিয়ে বহুবার তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সংশোধনী বা বাতিল সম্ভব হয়নি। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সম্মতি, পাশাপাশি অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভা ও স্থানীয় সরকারের সম্মতি। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। তাই নিকট ভবিষ্যতে এই ধারা পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম।
সংক্ষেপে বলা যায়, মামদানির রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব যতই বৃদ্ধি পাক, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তাকে শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে দেয়নি। জন্মসূত্রে নাগরিক না হওয়ায়, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না। এর ফলে, মামদানির জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যই থাকবে, এমনকি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় নেতা হিসেবেও থাকলেও সংবিধানগত বাধা অতিক্রম করা সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবে দেখাচ্ছে যে, সংবিধানগত বিধি ও নাগরিকত্বের সীমাবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পদে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। মামদানির মেয়র পদে বিজয় এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে এটি কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

