টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের ধনীদের শীর্ষে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তার সম্পদের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রথমবারের মতো তিনি ‘অর্ধ-ট্রিলিয়নিয়ার’ হয়েছেন, অর্থাৎ ৫০ হাজার কোটি ডলারের মালিক।
তবু এত বিপুল সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও মাস্ক বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন না বলে জানান। ২০২১ সালে তিনি প্রকাশ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে তার বসবাসের বাড়ির দাম মাত্র ৫০ হাজার ডলার। তার সাবেক সঙ্গী, কানাডীয় সংগীতশিল্পী গ্রাইমস ২০২২ সালে বলেন, ‘মানুষ যেমন ভাবেন, মাস্ক তেমন বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন না।’
২০২২ সালে মাস্কের বড় খরচের তালিকায় যুক্ত হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। তিনি ৪,৪০০ কোটি ডলারে এটি কিনে নামকরণ করেন ‘এক্স’। গ্রাইমস আরো জানান, মাস্ক প্রায় কখনোই বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন না এবং কখনো কখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। এমনকি একটি ফুটোযুক্ত ম্যাট্রেসের জন্যও নতুন কিনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
মানুষের ধারণার বিপরীতে, মাস্কের বিলাসবহুল বাড়ি নেই। তবে ব্যতিক্রমধর্মী গাড়ির প্রতি তার ভালোবাসা প্রবল। তার সংগ্রহে রয়েছে কোটি কোটি ডলারের জেট বিমানের পাশাপাশি দুর্লভ ও ঐতিহাসিক গাড়ি।
বাড়ি বিক্রি ও পুনঃস্বত্ব-
মাস্ক এক সময় ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের বেল-এয়ারের সাতটি বাড়ির মালিক ছিলেন। সাত বছরে প্রায় ১০ কোটি ডলার ব্যয় করে তিনি এসব বাড়ি কিনেছিলেন। বাড়িগুলোর মধ্যে সুইমিংপুল, টেনিস কোর্ট, ওয়াইন সেলার, ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ও বলরুম ছিল। এক বাড়ি ছিল কিংবদন্তি অভিনেতা জিন ওয়াইল্ডারের।
২০২০ সালে মাস্ক ঘোষণা দেন, তিনি প্রায় সব স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করবেন এবং নগদ অর্থের প্রয়োজন নেই। তবে জিন ওয়াইল্ডারের বাড়ি যেন ধ্বংস না হয়, তা শর্ত দেন। বাড়িটি পরে বিক্রি করা হলেও, ২০২৫ সালের জুনে ঋণের সমস্যার কারণে আবার তার মালিকানায় আসে।
বর্তমানে মাস্কের মূল বাড়ি টেক্সাসে, যার দাম মাত্র ৫০ হাজার ডলার। মাস্ক বলেন, ‘এটি আসলে দারুণ।’ তিনি প্রায়ই বন্ধুদের বাড়িতে অবস্থান করেন এবং টেসলার প্রকৌশল কাজের জন্য বে এরিয়ায় যান।
বিরল গাড়ি ও উড়োজাহাজের সংগ্রহ-
মাস্কের গাড়ির সংগ্রহে রয়েছে ফোর্ড ‘টি’ সিরিজ, ১৯৬৭ সালের জাগুয়ার ই-টাইপ রোডস্টার, ১৯৯৭ সালের ম্যাকলারেন এফ১, টেসলা রোডস্টার এবং ১৯৭৬ সালের লোটাস এসপ্রিট। লোটাসটি জেমস বন্ড সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছিল এবং ২০১৩ সালে মাস্ক এটি নিলামে কিনেন।
তার উড়োজাহাজ সংগ্রহে রয়েছে একাধিক গালফস্ট্রিম মডেল, যার দাম কয়েক কোটি ডলার। এসব উড়োজাহাজে চড়ে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এবং আন্তর্জাতিক সফরে যাতায়াত করেন।
দাতব্য কার্যক্রম-
মাস্ক বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় শত শত কোটি ডলারের শেয়ার দান করেছেন। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধান দেখিয়েছে, তিন বছর ধরে ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী যত অর্থ দান করতে চেয়েছিল, তার অনেকটাই দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক অনুদান তার কোম্পানির কাছে গেছে। মাস্ক ও তার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ভ্যানিটি ফেয়ার, নিউ ইয়র্ক টাইমস, টেড টক, বিভিন্ন রিপোর্টার রিপোর্ট

