সৌদি আরবের স্থপতি ও প্রকৌশলীরা ‘দ্য লাইন’ নামে ভবিষ্যতের নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনায় ব্যাপক কাটছাঁট করছেন। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রস্তাবিত ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ নগরটি লোহিত সাগরের উপকূলে তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এটি সৌদি আরবের মেগা প্রকল্প নিওমের প্রধান অংশ। তবে প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের মতে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলো বাস্তবসম্মত নয় এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
প্রকল্পের শুরুর দিকে ২০টি মডিউল তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও ২০২৩ সালে তা কমিয়ে তিনটিতে নামানো হয়েছে। একজন জ্যেষ্ঠ নির্মাণ ব্যবস্থাপক প্রকল্পটিকে ‘বিনিয়োগযোগ্য নয়’ উল্লেখ করেছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্পে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে এবং নির্মাণ কাজ তিন বছর ধরে চলছে।
নগরীর নকশা প্রদর্শনীর সময় যুবরাজ যে নির্দেশ দেন, তা সবাই বাধ্য হয়ে অনুসরণ করেন। প্রকল্পের মূল পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। প্রথম ধাপের বাসিন্দারা ২০২৫ সালে নগরে প্রবেশ করবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল।
পরিবেশ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এই পরিকল্পনা বিতর্কিত। নিওম প্রকল্প নির্মাণের জন্য কায়াল ও আল-খুরাইবা গ্রাম থেকে মানুষ উচ্ছেদ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রতিবাদকারীদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন আটক এবং পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে প্রকল্পের নির্মম কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিক শোষণের অভিযোগ উঠে এসেছে। গত বছর কুতুবদিয়ার একটি নির্মাণ কেন্দ্রে গার্ডরেল ধসে পাকিস্তানি প্রকৌশলী আবদুল ওয়ালি ইস্কান্দার খান নিহত হন। সৌদি কর্তৃপক্ষ এবং নিওমের নেতৃত্ব যথাযথ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ দেননি।
সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সৌদি আরব ৯২,৫০০ কোটি ডলারের সার্বভৌম সম্পদ বিনিয়োগ কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনছে। মেগা প্রকল্পগুলোতে ক্রমবর্ধমান বিলম্ব ও চ্যালেঞ্জের কারণে অগ্রাধিকার হারাচ্ছে। এর পরিবর্তে লজিস্টিকস, খনিজ সম্পদ, ধর্মীয় পর্যটন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সেন্টার নির্মাণে মনোযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত জুলাই মাসে জানা গেছে, নিওম এক হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে, যা মোট কর্মীর প্রায় ২০ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দ্য লাইন এবং নিওম প্রকল্পে কাঠামোগত ও আর্থিক পুনর্বিন্যাস চলছে।

