ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ও তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে টানা পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের পর এই তথ্য জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ।
উশাকভ রুশ গণমাধ্যমকে বলেন, আলোচনায় কোনো দিকেই অগ্রসর হওয়া যায়নি। সংকট সমাধানে এখনো অনেক পথ বাকি। তিনি বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ, গঠনমূলক ও তথ্যপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করলেও জানান, শান্তিচুক্তির মূল প্রশ্নগুলোতে দুই পক্ষ কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে কোন কোন এলাকায় কার নিয়ন্ত্রণ থাকবে—এই ইস্যুতেই মতভেদ রয়ে গেছে।
উশাকভ আরও বলেন, আলোচনার অনেক অংশ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে শিগগিরই নতুন কোনো বৈঠকের সম্ভাবনাও নেই।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ফক্স নিউজকে তিনি জানান, ইউক্রেন ভবিষ্যতে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে—এমন একটি গ্রহণযোগ্য কাঠামো তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা এগোতে পেরেছে।
ইউরোপ শান্তি চায় না—পুতিনের অভিযোগ
উইটকফ-কুশনারকে স্বাগত জানাতে গিয়ে পুতিন অভিযোগ করেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ইউরোপীয় দেশগুলো। তাঁর মতে, ইউরোপের প্রস্তাবগুলো রাশিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগোতে দিচ্ছে না।
পুতিন বলেন, রাশিয়ার ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো ইচ্ছে নেই। তবে ইউরোপ যদি সংঘাত শুরু করে, রাশিয়া প্রস্তুত। কোন ইউরোপীয় দাবি তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ মনে করেন—সেটা বিস্তারিত জানাননি।
উইটকফ এ বছর অন্তত ছয়বার মস্কো সফর করেছেন। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি এবার যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবের সংশোধিত সংস্করণ উপস্থাপন করবেন, যা কিয়েভের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা চলছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তিনি আলোচনার পর মার্কিন প্রতিনিধিদের সংকেতের অপেক্ষায় আছেন। তবে পশ্চিমা কূটনীতিকদের ধারণা, রাশিয়া এখনো কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। বরং মস্কো যুদ্ধ চালিয়ে যেতে এবং যুক্তরাষ্ট্র–ইউরোপ সম্পর্কের ভাঙন বাড়াতে চাইছে।
জেলেনস্কি এক্সে লিখেছেন, তিনি সব সংকেত গ্রহণে প্রস্তুত এবং ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্যও প্রস্তুত। সবকিছু নির্ভর করছে আলোচনার ফলাফলের ওপর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়, ইউরোপে জেলেনস্কির সঙ্গে উইটকফ-কুশনারের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
২৪ দফার বিতর্কিত শান্তি প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্রের মূল শান্তি প্রস্তাবে ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলের কিছু দখলকৃত এলাকা ছাড়ার শর্ত ছিল। পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর আকার কমানোর বিষয়ও ছিল, যা কিয়েভের জন্য অগ্রহণযোগ্য। জেলেনস্কি সংশোধিত প্রস্তাবকে আগের তুলনায় ভালো বলেছেন, তবে চূড়ান্ত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন।
পুতিনের দাবি, শুধু মূল প্রস্তাবই আলোচনার ভিত্তি হতে পারে। যদিও সেখানেও বড় ধরনের সংশোধন প্রয়োজন।
রাশিয়ার সর্বোচ্চ দাবিগুলো কার্যত ইউক্রেনের আত্মসমর্পণের সমতুল্য—সামরিক বাহিনীতে বড় কাটছাঁট, পশ্চিমা সামরিক সহায়তা সীমিতকরণ, রাজনৈতিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং পূর্বাঞ্চলের দখলকৃত ভূমি হস্তান্তর।

