ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী ট্রেনের ধাক্কায় সাতটি বন্য হাতি মারা গেছে। শনিবার ভোরে আসাম রাজ্যে এই ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রী আহত না হলেও প্রাণ হারানো হাতিগুলোর দৃশ্য স্থানীয়দের মধ্যে গভীর শোক ও উদ্বেগ তৈরি করেছে।
আসাম রাজ্যের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ভি. ভি. রাকেশ রেড্ডি জানান, ঘটনাস্থলেই সাতটি হাতির মৃত্যু হয় এবং আরও একটি হাতি আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়। নিউ দিল্লিগামী ট্রেনটি ভারতের প্রত্যন্ত মিজোরাম রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। সংঘর্ষের তীব্রতায় ট্রেনটির পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে।
ভারতীয় রেলওয়ের একজন মুখপাত্র কাপিনজল কিশোর শর্মা বলেন, ট্রেনের চালক সামনে হাতির পাল দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ব্রেক প্রয়োগ করেন। তবে এত বড় প্রাণীর দল হঠাৎ লাইনের ওপর চলে আসায় সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়নি। তাঁর ভাষায়, হাতির পালই ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দুর্ঘটনাটি কোনো ঘোষিত ‘হাতির করিডর’ এলাকায় ঘটেনি। যদিও এসব করিডরে আগে থেকেই ট্রেনের গতি সীমিত রাখা হয়, কিন্তু করিডরের বাইরের এলাকায় এমন দুর্ঘটনা নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
আসাম রাজ্যেই রয়েছে ভারতের সবচেয়ে বেশি বন্য হাতির আবাসস্থলগুলোর একটি। দেশজুড়ে আনুমানিক ২২ হাজার বন্য হাতির মধ্যে চার হাজারেরও বেশি বাস করে এই রাজ্যে। তবে বন উজাড়, অবকাঠামো নির্মাণ এবং মানুষের বসতি সম্প্রসারণের ফলে হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের সন্ধানে তারা বাধ্য হয়ে নতুন এলাকায় প্রবেশ করছে, যা মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে তুলছে।
ভারতের সংসদীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু ২০২৩-২৪ সালেই দেশজুড়ে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ৬২৯ জন মানুষ। একই সঙ্গে ট্রেন দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠছে, যা পরিবেশবিদদের গভীর উদ্বেগের কারণ।
এই দুর্ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল, উন্নয়ন আর বন্যপ্রাণী সুরক্ষা

