শিল্পের প্রতি গভীর আগ্রহ এবং ভাগ্য মাঝে মাঝে মানুষকে এমন কিছু উপহার দেয়, যা তাদের জীবন বদলে দিতে পারে। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে লিঙ্কনের একজন শিল্পী ডেভিড টেইলরের জীবনে, যখন তিনি একটি নিলামে মাত্র তিন লাখ টাকায় একটি চিত্রকর্ম কিনে ফেলেন। প্রথমে তিনি ভাবেননি ছবিটি এত মূল্যবান হতে পারে, কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি জানতে পারেন, এটি কানাডার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী হেলেন ম্যাকনিকলের হারিয়ে যাওয়া মাস্টারপিস “দ্য বিন হারভেস্ট”। বর্তমানে এর মূল্য অন্তত সাড়ে চার কোটি টাকা।
ঘটনাটি শুরু হয়েছিল স্থানীয় এক নিলাম ঘর থেকে, যেখানে ডেভিড ছবি দেখে মুগ্ধ হন এবং সেটি কিনে নেন। কিন্তু আসল চমক তখনও বাকি ছিল। বিবিসির “ফেক অফ ফোরচুন” নামক এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা ছবিটির সত্যতা যাচাই করে নিশ্চিত করেন, এটি হেলেন ম্যাকনিকলের আঁকা চিত্রকর্ম। অনুষ্ঠানটি গত ৩ অক্টোবর প্রচারিত হয়, যেখানে উপস্থাপক ফিওনা ব্রুস এবং বিশেষজ্ঞ ফিলিপ মৌল্ড ছবিটির অমূল্যতা নিশ্চিত করেন। ফিওনা ব্রুস উল্লেখ করেন, “ম্যাকনিকল ছিলেন বিশ শতকের শুরুতে একজন সাহসী নারী শিল্পী। যদিও তিনি শ্রবণশক্তি হারিয়েছিলেন, তবু তার শিল্পজীবন ছিল অনন্য। তিনি একজন পথিকৃৎ, এবং তার কাজগুলো সময়ের আগেই প্রশংসা পেয়েছিল।”
চিত্রকর্মটির ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। হেলেন ম্যাকনিকল বিশ শতকের প্রথম দিকে এই ছবি আঁকেন এবং ১৯১২ থেকে ১৯১৩ সালের মধ্যে কানাডায় পাঁচবার প্রদর্শিত হয়। তবে এরপর ছবিটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ একশ দশ বছর ধরে এই মাস্টারপিসটি নিখোঁজ ছিল। ডেভিড যখন ছবিটি কিনে নিজের সংগ্রহে রাখেন, তখন তিনি ভাবেননি এটি এত বিখ্যাত হবে। তবে তিনি যখন ছবিটি ফ্রেম থেকে বের করেন, তখন ম্যাকনিকলের স্বাক্ষর আবিষ্কার করেন। সেই মুহূর্ত থেকেই তিনি বুঝতে পারেন, তার কেনা এই ছবি একেবারেই সাধারণ কিছু নয়।
ডেভিডের মতে, “আমি প্রথম দিন থেকেই ছবিটিতে বিশ্বাস করেছিলাম। এটি এমন একটি কাজ মনে হয়েছে, যা একজন দক্ষ শিল্পীর হাত থেকে এসেছে।” এই বিশ্বাসের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় যখন ছবিটির মূল্য উঠে আসে সাড়ে চার কোটি টাকায়। ছবিটির মূল্য জানার পর ডেভিডের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। তার ভাষায়, “এটি আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।”
হেলেন ম্যাকনিকল ছিলেন কানাডার একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, যার কাজ ইমপ্রেশনিস্ট ধারার ছিল এবং গ্রামীণ দৃশ্যাবলির ছবি আঁকায় তিনি বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, মাত্র দুই বছর বয়সে তিনি শ্রবণশক্তি হারান, এবং ১৯১৫ সালে ডায়াবেটিসের জটিলতায় মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তার শিল্পজীবন থেমে যায়। তবুও তার কাজগুলো আজও শিল্পপ্রেমীদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
এই চিত্রকর্মটির মূল্যমান সম্পর্কে জানতে পেরে পিয়েরে ল্যাসন্ড নামক একজন দানশীল ব্যক্তি এবং ম্যাকনিকলের কাজের সংগ্রাহক ছবিটি ব্যক্তিগতভাবে দেখতে লন্ডনে আসেন। তিনি বলেন, “একটি ছবি ১১০ বছর ধরে নিখোঁজ ছিল, সেটি সত্যিই অসাধারণ। এটি যদি আমার সংগ্রহে যোগ করতে পারতাম তবে আমি অত্যন্ত খুশি হতাম।”
এই অভিজ্ঞতা ডেভিড টেইলরের জন্য একটি সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চারের মতো। এটি প্রমাণ করে যে শিল্পের প্রতি প্রেম এবং কৌতূহল কখনো কখনো আপনাকে এমন কিছু দেয়, যা আপনার কল্পনার চেয়েও বেশি।