২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩২
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ, লেখার ধরন : মিসির আলি বিষয়ক উপন্যাস, প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০০০, প্রকাশক : অন্যপ্রকাশ।
—–কাহিনী সারাংশটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট—–
কাহিনী সারাংশ-
মারহাবা খাতুন লিলি একটা চিঠি নিয়ে দেখা করতে এসেছে মিসির আলির সাথে। তার স্বমী সুলতান সাহেব লিখেছে সেই চিঠি। তিনি পঙ্গু বলে মিসির আলির সাথে দেখা করতে আসতে পারছেন না। তাই তিনি চিঠি লিখে মিসির আলিকে তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাবার নিমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। কিন্তু মিসির আলির যাওয়ার কথা টেকনাফে, তার এক ছাত্র তার জন্য বেরাবার সব ঠিক করে রেখেছেন, তাই তিনি ঠিক করলেন টেকনাফেই যাবেন। দ্বিতীয় দিন লিলি আবার আসলো, এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত পালটিয়ে ঠিক করলেন মিলির সাথে তারদের বাড়িতেই যাবেন।
মিসির আলি আর লিলি তাদের বাড়িতে পৌছায় রাতের ১০টার দিকে। আশেপাশে আর কোনো বাড়ি নেই, চারপাশ অন্ধকারে ডুবে আছে। লিলি অনেক ডাকাডাকি করার পরে তাদের দারোয়ান বরকত এসে গেট খুলে দিল। বাড়িতে ঢোকার পরে লিলির স্বামী সুলতানের সাথে আলাপ হয় মিসির আলির।
পরদিন ভোরে মিসির আলি ঘুরে ফিরে বাড়িটি দেখার সময় দেখতে পান বাড়ির পিছনে একটি কালী মন্দির আছে। এই বাড়িটি আগে ছিল অশ্বিনী বাবুর। অশ্বিনী বাবুকে কালী নিজে স্বপ্নে দেখা দিয়ে এই মন্দির তৈরি করতে বলেন। মন্দির তৈরির পরে তিনি আবার স্বপ্ন দেখেন তাকে নরবলি দিতে হবে, তিনি রাজি হন না। অমাবস্যার পরদিন তিনি দেখেন তার বড় মেয়ে মন্দিরে পরে আছে মৃত, তার ধর থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে আছে। এরপর তিনি সেই কালী মূর্তী মেঘনা নদীতে ফেলে দেন। তাতেও কোন লাভ হয় না, একই ভাবে তার মেঝ মেয়ে মারা পরে। তিনি ভয়ে বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে জলপাইগুড়ি চলে যান, সেখানে একই ভাবে তার তৃতীয় মেয়ে মারা যান। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত দেখা যায় অশ্বিনী বাবু একজন সিরিয়াল কিলার, তিনিই তার ৩ মেয়েকে খুন করেছেন।
মিসির আলি লিলিদের বাড়িতে দুই রাত রইলেন। দুই রাতেই তিনি স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নগুলি তার কাছে সত্যি বলে মনে হলো। সুলতান মিসির আলিকে জানালো, দুই রাতেই মিসির আলিকে ধুতরা ফুলের মধু খাওয়ানো হয়েছে বলে তিনি এমন স্বপ্ন দেখেছেন। সুলতান আসলে পঙ্গু নন। মিসির আলিকে আটকে রাখার জন্য সুলতান এখানে তাকে ডেকে আনিয়েছে। এর আগেও তিনি আরো অনেককে এভাবে ডেকে আনিয়েছেন এবং তাদের কেউ আর এখান থেকে জীবিত ফিরে যেতে পারেনি। অথর্ৎ সুলতানও একজন সিরিয়াল কিলার।
সুলতান মিসির আলিকে পড়ার জন্য তার লেখা একটা ডাইরি দেন। সেখান থেকে মিসির আলি জানতে পারেন, সুলতানের পরিবার ছিলো খুবই ধনী। তারা ছিলো অনেকগুলি ভাই বোন। পুরনো ঢাকার বিশাল এক বাড়িতে তারা থাকতো। একদিন হঠাৎ ঘুমের মধ্যে তার বড় বোন মারা গেল। কিছু দিনের মধ্যেই মারা যায় তার আরেক ভাই, তার পরেই ছোট বোন। পরাপর মৃত্যুতে ভয় পেয়ে যান সুলতানের বাবা। তার বাবা তাদের সবাইকে নিয়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তাদের পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষক ঠিক করা হয়। শিক্ষক তাদেরকে নানা ধরনের শাস্তি দিতেন। একদিন সুলতানকে পুরনো এক কালী মন্দিরে বন্দি করে শাস্তি দেন। সেখানেই সুলতান দেখতে পায় স্বেত কালীকে। কালী তাকে পরামর্শ দেয় শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে কুয়াতে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতে। শিক্ষককে কুয়াতে ফেলার পরে সেই কালী সুলতানকে বলে ভুলেও কুয়ার কাছে না যেতে, কুয়ার কাছে গেলে তার ক্ষতি হবে।
বর্তমাণের বাড়িটিতে মন্দিরের পিছনে একটি কুয়া আছে। সুলতান মন্দিরে ১৪-১৫ বছরের একটি মেয়েকে আটকে রেখেছে। মেয়েটিকে বলি দিয়ে মিসির আলিকে ভয় দেখানো হবে। এদিকে মিসির আলি তার পর্যবেক্ষণের গুণে সহজেই সুলতানের কুয়া ভীতিটা ধরে ফেলেন। সেই ভীতিটাই কাজে লাগিয়ে মিসির আলি সুলতানকে পরাজিত করে বাচ্চা মেয়েটিকে উদ্ধার করেন।