Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sun, Oct 26, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • প্রযুক্তি
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট : উইলিয়াম শেকসপিয়র
    সাহিত্য

    রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট : উইলিয়াম শেকসপিয়র

    এফ. আর. ইমরানNovember 30, 2024
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ (ইংরেজি : Romeo and Juliet) হচ্ছে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত একটি বিয়োগান্তক নাটক, যা গড়ে উঠেছে দুজন প্রেমিক-প্রেমিকাকে কেন্দ্র করে।১ পরবর্তীকালে তাদের মৃত্যু বিবাদমান দুই পরিবারকে একত্রিত করে। এটি শেকসপিয়রের জীবদ্দশায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পাঠকনন্দিত নাটক। একই সাথে হ্যামলেট, এবং ম্যাকবেথও ছিলো পাঠক নন্দিত ও সমান জনপ্রিয়। প্রাচীন যুগের সাহিত্যে বিয়োগান্তক প্রেমের উপাখ্যানের একটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। রোমিও জুলিয়েট নাটক সেই ধারার অন্তর্গত। মূল কাহিনী ইতালির একটি প্রচলিত গল্পকে অবলম্বন করে যার অনুবাদ কবিতা রূপে প্রকাশ করেন আর্থার ব্রুক ১৫৬২ তে তাঁর ‘দ্য ট্রাজিকাল হিস্ট্রি অফ রোমিয়াস এণ্ড জুলিয়েট’ বইতে আর গদ্যরূপে প্রকাশ করেন উইলিয়াম পেণ্টার ১৫৬৭ তে তাঁর ‘প্যালেস অফ প্লেজার’ বইতে। শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েটে, যা নাকি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর ৯০র দশকে রচিত হয়, এই দুই রচনার গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

    কিন্তু শেক্সপিয়ার তাঁর নাটকে অনেক পার্শ্বচরিত্র, যেমন মার্কুশিও, প্যারিস ইত্যাদি যোগ করেন। নাটকটি প্রথম পুস্তিকাকারে প্রকাশ পায় ১৫৯৭ সালে (কোয়ার্টো সংস্করণ)। প্রথম পুস্তিকাটির গুণগত মান খুবই ন্যূন ছিল, পরের সংশোধিত সংস্করণগুলি অবশ্য শেক্সপিয়ারের মূল রচনার সংগে অনেক বেশি সংগতি রক্ষা করেছে। এই নাটকে শেক্সপিয়ারের কাব্যিক শৈলীতে নাটকীয় সংঘাতের উপস্থাপনা, গৌণ চরিত্রগুলিকে যথোচিত মর্যাদা দেওয়া এবং কাহিনীর সংগে নানা উপকাহিনী যোগ করে নাটকটিকে সমৃদ্ধ করা- সবই তাঁর নাট্যকার হিসাবে দক্ষতার পরিচয় বহন করে। চরিত্রের সংগে সাযুজ্য রক্ষা করে বিভিন্ন ছাঁদের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। রোমিও জুলিয়েট রঙ্গমঞ্চ, ছায়াছবি, সঙ্গীত-জলসা, যাত্রা ইত্যাদি নানা বিনোদন মাধ্যমে নানা রূপে অসংখ্যবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সপ্তদশ শতকে উইলিয়াম ডেভনান্ট নাটকের পুনরুদ্ধার ও বহু পরিমার্জন করেন। অষ্টাদশ শতকে ডেভিড গ্যারিক কিছু দৃশ্যের পরিবর্তন করেন, কিছু আপত্তিকর অংশ(তৎকালীন মতে) বাদ দেন। জর্জ বেন্ডা রোমিও জুলিয়েটের মিলনান্তক পরিণতি ঘটান। ঊনবিংশ শতকের অভিনয়ানুষ্ঠান প্রধানত মূল রচনাশ্রয়ী, অভিনেত্রী শার্লট কুশমানের কাজ এই তালিকায় পড়ে। জন গিলগাডের ১৯৩৫ সালের রূপায়নও মূল রচনানুসারী। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে রোমিও এন্ড জুলিয়েট চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে ১৯৩৬ সালে জর্জ কুকার, ১৯৬৮ সালে ফ্রাংকো জেফিরেলি, ১৯৯৬ তে বাজ লুরমানের এবং ২০১৪ তে ব্রডওয়ে কোম্পানির নাম উল্লেখযোগ্য।

    সারাংশ

    নাটকটি ইতালির ভেরোনা শহরের পটভূমিতে রচিত। শুরুতেই দেখা যায় মণ্টেগু ও ক্যাপুলেটের ভৃত্যদ্বয় পথে বচসায় রত, মনিবদের মতন তারাও আজীবন শত্রু। বচসা চরমে উঠলে প্রিন্স এসকলাস মধ্যস্থতা করতে বাধ্য হন এবং তিনি ঘোষণা করেন পুনরায় কেউ নগরের শান্তি ভঙ্গ করলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। পরে কাউন্ট প্যারিস ক্যাপুলেট-কন্যা জুলিয়েটকে বিবাহ করতে চাইলে ক্যাপুলেট তাকে আরো দুই বছর অপেক্ষা করতে বলেন এবং তাকে আসন্ন ক্যাপুলেটের নাচের আসরে নিমন্ত্রণ জানান। জুলিয়েটের মা ও ধাত্রী জুলিয়েটকেে প্যারিসের বিবাহ প্রস্তাব গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন। এদিকে মন্টেগুতনয় রোমিও, ক্যাপুলেট পরিবারের কন্যা রোজালিনের প্রতি প্রণয়াসক্ত, রোমিওর ভাই তথা বন্ধু বেনভোলিও তা জানতে পারে। ক্যাপুলেটের নাচের আসরে রোজালিন আসবে জেনে বেনভোলিও ও মার্কুশিও, রোমিওর আরেক বন্ধু, রোমিওকে নিয়ে ছদ্মপরিচয়ে সেই নাচের আসরে যায়। সেখানে রোমিওর জুলিয়েটের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়, প্রথম দর্শনেই তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হয়॥ আসরে রোমিওদের প্রকৃত পরিচয় ধরা পড়ে যায়। ক্রূদ্ধ টিবাল্ট, জুলিয়েটের ভাই, রোমিওকে হত্যা করতে যায় কিন্তু জুলিয়েটের পিতা তাকে নিবৃত্ত করেন। বাড়ি ফেরার পথে রোমিও মত পরিবর্তন করে ক্যাপুলেটের বাগানে চুপিসাড়ে প্রবেশ করে। জুলিয়েট তখন বাড়ির দ্বিতল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনমনে রোমিওকে প্রেম নিবেদন করছে। রোমিও তা শুনতে পেয়ে আত্মপ্রকাশ করে। উভয়ের প্রেম বিনিময়ের পরে তারা শীঘ্র বিবাহ করতে মনস্থির করে। সন্ন্যাসী লরেন্স, যিনি এই দুই পরিবারের মিলন চাইতেন, পরের দিন গোপনে দুই প্রেমিক-প্রেমিকার বিবাহ দেন। টিবাল্টের ক্রোধ তখনো শান্ত হয়নি। রোমিওর সঙ্গে তার নূতন সম্পর্ক সম্বন্ধে অনবহিত সে রোমিওকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানায়।

    রোমিও কিন্তু আত্মীয়তার কথা ভেবে সে আহ্বান অস্বীকার করে। সম্মান রাখতে মার্কুশিও দ্বন্দ্বযুদ্ধ স্বীকার করে নেয়, রোমিও যখন যুদ্ধ থামাতে চাইছে, টিবাল্টের তরবারির আঘাতে মার্কুশিও প্রাণ হারায়।২ শোকে উন্মত্ত রোমিও টিবাল্টকে হত্যা করে। বিচারে দুপক্ষের কথা শুনে রাজা রোমিওকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন না বটে কিন্তু তাকে অবিলম্বে ভেরোনা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন এবং কখনো তাকে ভেরোনায় দেখা গেলে তার প্রাণদণ্ড অবধি হতে পারে এ কথাও জানিয়ে রাখলেন। রোমিওর নির্বাসনে সদ্য পরিণীতা জুলিয়েটের হৃদয় ভেঙে গেল। টিবাল্টের মৃত্যুই এই শোকের কারণ বলে সকলে মনে করল। পিতা ক্যাপুলেটও আর দেরি না করে কাউন্ট প্যারিসের সঙ্গে জুলিয়েটের বিবাহ এখনই দিয়ে দিতে চাইলেন। জুলিয়েটের আপত্তি কেউ কানেও তুলল না। অসহায় জুলিয়েট সাহায্যের জন্য সন্ন্যাসী লরেন্সের কাছে ছুটে গেল। তিনি জুলিয়েটকে একটি পুষ্পনির্যাস দিলেন, যেটি পান করলে বিয়াল্লিশ ঘণ্টার জন্য দেহে সমস্ত প্রাণস্পন্দন থেমে যাবে। ইতোমধ্যে তিনি রোমিওকে খবর পাঠাবেন, সমাধিগৃহে জ্ঞান ফিরলে জুলিয়েট সামনে প্রিয়তম রোমিওকে দেখতে পাবে। জুলিয়েট সন্ন্যাসীর কথামত কাজ করল। পরিবারের সকলে তাকে মৃত ভেবে পারিবারিক সমাধিগৃহে সমাধিস্থ করে এল। সন্ন্যাসীর বার্তাবাহক কিন্তু রোমিওর কাছে পৌঁছায়না। তার আগেই ভৃত্য বালথাসারের কাছে রোমিও জানতে পারে জুলিয়েটের অন্তিম সংবাদ। ভগ্নহৃদয় রোমিও এক ওষুধের দোকানে কিছু বিষ জোগাড় করে সোজা চলে যায় ক্যাপুলেটদের সমাধিগৃহে। প্রবেশপথে দেখা হয় জুলিয়েটের পাণিপ্রার্থী কাউন্ট প্যারিসের সঙ্গে, সেও এসেছে নিভৃতে শোক নিবেদন করতে। প্যারিস সন্দেহ করে রোমিওর কোনো দুরভিসন্ধি আছে। উভয়ের বচসা. তার থেকে দ্বন্দ্ব, রোমিওর হাতে প্যারিস মারা যায়। জুলিয়েট তখনো মৃতবৎ, তাকে শেষবারের মত দেখে রোমিও বিষ পান করে। এরপরেই বিয়াল্লিশ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়, জুলিয়েট চোখ মেলে রোমিওকে মৃত দেখে শোকে অধীর হয়ে রোমিওর ছুরি দিয়ে আত্মহত্যা করে। দুই বিরোধী পরিবার ও রাজা সমাধিগৃহে মিলিত হন। সন্ন্যাসী লরেন্স অশুভগ্রহদুষ্ট প্রেমিকযুগলের কাহিনী বর্ণনা করেন। সন্তানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের দীর্ঘদিনের শত্রুতার অবসান হয়।

    উৎস

    প্রাচীন কালের বহু প্রেমোপাখ্যানের ছায়া শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েটে দেখতে পাওয়া যায়। খৃষ্টীয় প্রথম শতকের রোমান কবি ওভিদের মেটামর্ফোসিস কাব্যের পিরামাস ও থিসবে চরিত্র দুটি তার অন্যতম উদাহরণ।৩ প্রেমিকদের পারিবারিক শত্রুতা, পিরামাসের থিসবের মৃত্যু সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা রোমিও জুলিয়েট কাহিনীর অনুরূপ। খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের গ্রিক কবি জেনোফোন অফ এফেসাস রচিত এফেসিয়াকার সঙ্গেও রোমিও জুলিয়েট কাহিনীর নানা সাদৃশ্য রয়েছে, যেমন, প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ, ঘুমপাড়ানি নির্যাস।৪

    চতুর্দশ শতকের ইতালীয় কবি দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’তে মন্টেগু ক্যাপুলেট নামের উল্লেখ পাওয়া যায়, যদিও সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে, মূল কাহিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আলেখ্য অনুযায়ী মন্টেগু ভেরোনার একটি রাজনৈতিক দল যদিও ক্যাপুলেট ক্রিমোনা শহরের একটি অভিজাত পরিবার।৫ পক্ষান্তরে পঞ্চদশ শতকের ইতালীয় কবি মাসুসিও সালেরনিতানো সিয়েনা নগরের পটভূমিতে মারিওত্তো ও গিয়ানোজাকে নিয়ে যে নভেল রচনা করেন(১৪৭৬ এ প্রকাশিত)৬ তার সঙ্গে রোমিও জুলিয়েট কাহিনীর মিল অনেক স্পষ্ট, যেমন নায়ক নায়িকার গোপন বিবাহ, সন্ন্যাসীর ভূমিকা, সম্ভ্রান্ত এক ব্যাক্তির হত্যা, নায়ক মারিওত্তোর নির্বাসন, নায়িকা গিয়ানোজাকে বিবাহে বাধ্য করা ও মৃত্যুকল্প নির্যাস। শেষাংশে মারিওত্তো ধরা পড়ে, তার শিরোশ্ছেদ করা হয়, সেই শোকে গিয়ানোজা মারা যায়।৭’৮ সালেরনিতানো দাবী করেন এটি একটি সমসাময়িক সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।

    একই বিষয় নিয়ে লুইগি দা পোর্তো(১৪৮৫-১৫২৯) রচনা করেন ‘গিলেত্তা এ রোমিও’।৯ রচনাটি তাঁর বিখ্যাত হিস্টোরিয়া নভেলামেন্ত “রিত্রোভাতা দি দিউ নোবিলি আমান্তি”(‘দুই মহান প্রেমিক প্রেমিকার নবলব্ধ কাহিনী’, ১৫২৪ সালে লিখিত ও লেখকের মৃত্যুর পরে ১৫৩১ সালে প্রকাশিত)গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।১০’১১ দা পোর্তোর রচনায় “পিরামাস ও থিসবে”, বোকাচিওর “ডেকামেরন”, সালেরনিতানোর “মারিওত্তো ও গিয়ানোজা”র ছায়া লক্ষ্য করা যায়। মতান্তরে এটি লেখকের আত্মজীবনীমূলক। ১৫১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, পোর্তো তার সৈনিকজীবনে উদিন শহরে সাভোর্গনান গোষ্ঠীর গৃহে অনুষ্ঠিত স্ট্রমিয়েরি গোষ্ঠীর সঙ্গে সাভোর্গনান গোষ্ঠীর যুদ্ধবিরতির উৎসবে যোগ দেন ও গৃহস্বামীকন্যা লুসিনার প্রেমে পড়ে যান। অভিভাবকরা সে সম্পর্ক অনুমোদন করেন না। পরের দিন সাভোর্গনান উদিন শহর আক্রমণ করে। স্ট্রমিয়েরি গোষ্ঠীর বহু লোক মারা যায়, পোর্তোও গভীর আহত হন ও চিরতরে পঙ্গু হন। এক বছর বাদে তাঁর মন্টোর্সো ভিসেন্টিনোর আবাসে তিনি “গিলেত্তা এ রোমিও” রচনা করেন ও প্রেমিকা লুসিনাকে উৎসর্গ করেন।১২ পোর্তোর দাবী তাঁর কাহিনী একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, সালেরনিতানোর একশ বছর আগে ঘটেছে, যখন ভেরোনায় রাজত্ব করছেন বার্থোলোমিউ ডেলা স্কালা।১৩ পোর্তোর রচনায় নামকরণ থেকে শুরু করে আমাদের পরিচিত রোমিও জুলিয়েটের সর্বাধিক ঘটনা ও চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। ভেরোনা শহর, মন্টেচি ও ক্যাপুলেট পরিবার, চরিত্রের মধ্যে সন্ন্যাসী লরেন্স, মার্কুশিও, টিবাল্ট, বিশ্বস্ত ভৃত্য, ধাত্রী ও মুখ্য ঘটনার মধ্যে দুই পরিবারের জন্মগত শত্রুতা, নাচের আসরে রোমিও জুলিয়েটের প্রথম সাক্ষাৎ ও প্রেম, ব্যালকনি দৃশ্য, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের মিলন প্রভৃতি শেক্সপিয়ারের নাটকের সঙ্গে সাদৃশ্যের উদাহরণ।১৪ ১৫৫৪ সালে ইতালীয় কবি-সাহিত্যিক মাত্তিও বান্দেল্লো সম্পাদিত ‘নভেলে’তে ‘গিলেত্তা এ রোমিও’ অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৫৬২ খৃঃতে আর্থার ব্রুক বর্ণনাত্মক কবিতা রূপে প্রকাশ করেন তাঁর “দ্য ট্রাজিকাল হিস্ট্রি অফ রোমিয়াস এণ্ড জুলিয়েট”।১৫ ১৫৬৭ খৃঃতে প্রকাশিত হয় উইলিয়াম পেণ্টারের ইতালিয় গল্প সংকলন “প্যালেস অফ প্লেজার,১৬ যার “গডলি হিস্ট্রি অফ ট্রু এণ্ড কন্স্ট্যান্ট লাভ অফ রোমিও এণ্ড জুলিয়েট” কাহিনীটি রোমিও জুলিয়েটকে নিয়ে। প্রসঙ্গত শেক্সপিয়ারের “মার্চেন্ট অফ ভেনিস”, “মাচ অ্যাডো অ্যাবাউট নাথিং”, “অল ইজ ওয়েল দ্যাট এনডস ওয়েল” এবং “মেজার ফর মেজার” নাটকও ইতালিয় কাহিনী থেকে নেওয়া। সেই সময় নাটকপ্রেমীদের কাছে ইতালিয় কাহিনীর বিশেষ জনপ্রিয়তা ছিল। তুলনায় সমকালীন ইংরাজ লেখক ক্রিস্টোফার মার্লোর “হিরো এণ্ড লিয়ান্ডার” বা “ডিডো, কুইন অফ কার্থেজ” লেখার প্রভাব শেক্সপিয়ারের রচনায় কম।

    সময় এবং বিষয়বস্তু

    রোমিও জুলিয়েট নাটকের সঠিক রচনাকাল অনিশ্চিত, জুলিয়েটের নার্স এক দৃশ্যে এগার বছর আগের এক ভূমিকম্পের উল্লেখ করে,১৭ তা যদি ১৫৮০ সনের ইংলণ্ডের ডোভার স্ট্রেইটের ভূমিকম্প হয় তবে নাটকের ঘটনাকাল ১৫৯১, যদিও অন্য কোনো ভূমিকম্পের সম্ভাবনা, ইংলণ্ড বা ভেরোনায়, একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।১৮ তবে নাটকের রচনাশৈলীর সঙ্গে শেক্সপিয়ারের ১৫৯৪-১৫৯৫ সনে রচিত ‘মিড সামার নাইট ড্রিম’ প্রভৃতি কয়েকটি নাটকের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে অনেকে এটিও সেইসময়ের রচনা মনে করেন। এমনও হতে পারে শেক্সপিয়ার রচনা শুরু করেন ১৫৯১তে শেষ করেন ১৫৯৫তে।১৯ শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট প্রথম প্রকাশিত হয় পুস্তিকাকারে (কোয়ার্টো) ১৫৯৭ সালে, মুদ্রক জন ডান্টার। এই পুস্তিকাটির সঙ্গে পরবর্তী প্রকাশনার এতই তফাৎ যে একে মন্দ পুস্তিকা (Bad Quarto)বলা হয়। বিংশ শতাব্দীর সম্পাদক টি. জে, বি. স্পেন্সার পুস্তিকাটি সম্বন্ধে তীব্র বিতৃষ্ণা প্রকাশ করে বলেছেন এটি সম্ভবতঃ দুএকজন চরিত্রাভিনেতার ত্রুটিপূর্ণ স্মৃতির উপর নির্ভর করে লেখা, হয়তো বেআইনি ভাবে।২০ মতান্তরে, নাটকটি মঞ্চস্থ করার আগে তৎকালীন প্রথা অনুযায়ী অনেক কাটাছেঁড়া করা হয়, যার ফলে এই বিপত্তি। আরেকটি মত হোলো ‘মন্দ পুস্তিকা’ শেক্সপিয়ারের নিজেরই রচনা, পরে তিনি এটিকে পরিমার্জন/পরিবর্ধন করেন।২১ যাই হোক, ১৫৯৭ সালে এর প্রকাশ সুনিশ্চিত করে যে রোমিও জুলিয়েট ১৫৯৬ বা তার আগেই রচিত হয়েছে।

    ১৫৯৯ সালে পুস্তিকার উন্নততর সংস্করণ প্রকাশিত হয়, মুদ্রক টমাস ক্রিড, প্রকাশক কুথবার্ট বার্বি। এতে নাটকটি ‘মোস্ট এক্সেলেন্ট এন্ড ল্যামেন্টেবল ট্র্যাজেডি অফ রোমিও এন্ড জুলিয়েট’ নামে স্থান পেয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রথম সংস্করণের চেয়ে ৮০০ লাইন বেশি। এর প্রচ্ছদে লেখা, সদ্য সংশোধিত, পরিবর্ধিত ও পরিবর্তিত। গবেষকরা মনে করেন এটি একটি প্রাক-মঞ্চাভিনয় খসড়া। ত্রুটি এতেও রয়েছে তবু প্রথমটির তুলনায় এটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। ১৬০৮, ১৬২২ ও ১৬৩৭ সালে এর পুনর্মুদ্রন প্রকাশিত হয়। পরবর্তী কালে রোমিও জুলিয়েটের সব প্রকাশনাই একে অনুসরণ করেছে। শেক্সপিয়ারের সমগ্র রচনাবলী যা ফার্স্ট ফোলিও নামে সমধিক পরিচিত ১৬২৩ সালে প্রকাশিত হয়। অন্যান্য সংস্করণও প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৬৩২, ১৬৬৪ ও ১৬৮৫ সালে।২২ এগুলির সমন্বয়ে ১৭০৯ সালে নিকোলাস রো ও ১৭২৩ সালে আলেকজাল্ডার পোপ প্রকাশ করেন আধুনিক সংস্করণ। পোপের সংস্করণে কিছু তথ্য যা ২য় পুস্তিকায় নেই কিন্তু ১মটিতে আছে তা যোগ করা হয়েছে। টিকাভাষ্য সহ সংস্করণ প্রথম প্রকাশ হয় ঊনবিংশ শতকে- ভিক্টোরিয়ান যুগে।২৩

    মূলভাব

    ‘রোমিও এন্ড জুলিয়েট’ নাটক কোনো একটি বিশেষ ভাবের ধারক নয়- ভাববৈচিত্র্যের সমাহার। কারো মতে মানবচরিত্রের বহুমুখীতা, শুভাশুভের দ্বন্দ্ব নাটকের উপজীব্য, কারো মতে কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের সংঘাত এর মূল বিষয়, আবার অনেকের মতে নিয়তির অপরিসীম ক্ষমতাই এখানে দেখানো হয়েছে। যদিও কোনোটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় তবু নীচের আলোচিত ধারণা গুলোই সমধিক গ্রাহ্য।

    প্রেম

    রোমিও জুলিয়েটের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় যৌবনের প্রেমের আবেগ।২৪ রোমিও জুলিয়েটকে এখনো তরুণ প্রেমের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। নাটকে প্রেমের প্রাধান্য বিবেচনা করে গবেষকরা নানাভাবে এই প্রেম ও প্রেমনিবেদনকে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন।২৫ তার একটি হোলো নাটকের প্রেমসংলাপ যা অধিকাংশ সময়েই উপমাত্মক। ধরনটি রেনেসাঁস যুগের ইতালীয় সাহিত্যক বালদাসার কাস্তিগ্লিওন প্রবর্তিত। তাঁর মতে নায়ক যদি এ ভাষায় প্রেম নিবেদন করে তবে নায়িকা না বোঝার ভান করে এড়িয়ে যেতে পারে। উপমার্থে শেক্সপিয়ার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নানা ধর্মীয় শব্দের প্রয়োগ করেছেন। আবার বহুস্থানে প্রচলিত রীতি ভেঙ্গেওছেন। ব্যালকনি দৃশ্যে জুলিয়েটের আত্মমগ্ন প্রেমসম্ভাষণ, রোমিওর আড়ি পেতে শোনা, পরস্পরকে প্রেম নিবেদন ও ঝটিতি বিবাহের প্রস্তাব, মাত্র একদিনের আলাপে, সবই প্রচলিত সামাজিক রীতি বহির্ভূত। শেষ দৃশ্যে সমাধিকক্ষে নায়ক-নায়িকার আত্মহননও ক্যাথলিক নীতিবিরোধী। নাট্যকারের মৃত্যুকে গরিমান্বিত করা, প্রণয়ীর সঙ্গে একাসনে বসানোও সেযুগে তর্কসাপেক্ষ ছিল।

    ভাগ্য এবং সুযোগ

    নাটকে নিয়তির ভূমিকা নিয়ে সমালোচকরা একমত নন। নায়ক-নায়িকার যে পরিণতি- তা কি ভাগ্যের পরিহাস না ঘটনার ফলশ্রুতি! ভাগ্যতত্ত্বের প্রবক্তারা নায়ক-নায়িকাকে অশুভগ্রহদুষ্ট বলে অভিহিত করেন।২৬ পক্ষান্তরে অনেকে মনে করেন নাটকটি যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য ঘটনাপ্রবাহর উপরে দাঁড়িয়ে। উদাহরণস্বরূপ, রোমিওর নির্বাসন টিবাল্টের মৃত্যুর কারণে, আবার টিবাল্টের মৃত্যু কোনো নিয়তির খেলা নয় মার্কুশিওর হত্যাই রোমিওকে উদ্বুদ্ধ করেছিল দণ্ডনীয় কাজ করতে।২৭

    দ্বৈতবাদ (আলো ও আঁধার)

    নাটকে আলো ও আঁধারের বিশেষ ব্যবহার রয়েছে। ক্যারোলিন স্পার্জিয়নের ভাষায় আলো এখানে তরুণ প্রেমের প্রতীক। রোমিও এবং জুলিয়েট উভয়েই পরস্পরকে দেখে অন্ধকারের মধ্যে আলোর প্রকাশ রূপে। রোমিও জুলিয়েটকে তুলনা করে সূর্য,২৮ আলোকবর্তিকা২৯ ও হীরার ঝলকানির৩০ সাথে। সমাধিকক্ষে আপাতমৃত জুলিয়েটের রূপ তার মনে হয় কক্ষকে আলোকিত করে তুলেছে। জুলিয়েট রোমিওকে মনে করে রাত্রির মধ্যে দিন, কৃষ্ণপটে উজ্জ্বল নীহারকণা।৩১’৩২ আলো এবং আঁধার প্রকৃতপক্ষে ভালবাসা এবং ঘৃণা, তারুণ্য এবং পরিপক্কতা-এদেরই দ্যোতক। আলো ও আঁধারের বৈপরীত্য নাটকে বিচিত্র ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম আলোর প্রতীক। কিন্তু তাদের মিলন ঘটে রাত্রির অন্ধকারে। অপরপক্ষে পারিবারিক হিংসা যা আঁধারের প্রতীক তার প্রকাশ ঘটে দিবালোকে। নাটকের শেষ দৃশ্যে বিষণ্ণ প্রভাতে, সূর্য যখন মুখ লুকিয়েছে, আলো এবং অন্ধকার তাদের যথাযথ স্থানে ফিরে যায়। বাহিরের অন্ধকার যেন দুই পরিবারের দীর্ঘদিনের সঞ্চিত রাগ-বিদ্বেষ, রোমিও জুলিয়েটের প্রেমালোক সূর্যের ম্লান আলো হয়ে সকলের মনের অন্ধকার দূর করে দেয়।

    সময়

    নাটকে সময় বা কালের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রোমিও জুলিয়েট কঠোর প্রতিকূল বাস্তবের মধ্যে নিরন্তর এক কল্পনার জগৎ গড়ে তুলতে চেয়েছে যেখানে সময় স্তব্ধ। রোমিও যখন জুলিয়েটকে চাঁদের শপথ নিয়ে প্রেম জানায় জুলিয়েট প্রতিবাদ করে কারণ চাঁদ নিয়ত পরিবর্তনশীল। নায়ক-নায়িকাকে অশুভগ্রহদুষ্ট বলে চিহ্নিত করার মধ্যেও রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাস য়েখানে নক্ষত্রের গতি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে। নাটকের প্রথমে ও শেষভাগে জুলিয়েটের মৃত্যুসংবাদ শোনার পরে রোমিওকে তার জীবনে নক্ষত্রের প্রভাবের কথা বলতে শোনা গেছে। কাহিনীর গতি আর একটি লক্ষণীয় বিষয়। নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি সময়ের ব্যাপ্তি মাত্র পাঁচ থেকে ছয় দিন। জি টমাস ট্যানসেলের মতন পণ্ডিতেরা মনে করেন শেক্সপিয়ারের দৃষ্টিতে ত্বরা হোল তারুণ্যের প্রতীক আর ধীরতা প্রতীক প্রাচীনতার। রোমিও জুলিয়েট সময়কে অতিক্রম করে তাদের প্রেমকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছে, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাদের আকাঙ্খা পূর্ণ হয়।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    বাংলাদেশ

    ভোলায় অব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ উদ্বেগজনক

    October 25, 2025
    পুঁজিবাজার

    আইপিও খরার আড়ালে কি চলছে পুঁজিবাজারে?

    October 25, 2025
    অপরাধ

    চান্দিনায় ভূমি অফিসের পিয়নের ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

    October 25, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.