‘অন্যদিন’ এটি হুমায়ূন আহমেদ লেখার একটি উপন্যাস।
কাহিনী সংক্ষেপ :
নীলগঞ্জ থেকে রঞ্জু এসেছে ঢাকায় তার বন্ধু শফিকের কাছে। রঞ্জুর গ্রামের বাড়িতে আছে অতি দরিদ্র বেকার বাবা, মা আর দুই ভাই বোন আনজু ও পারুল। রঞ্জু অনেক কষ্টে শফিকের মেস খুঁজে বের করে এসে দেখে শফিক নেই। তার পাশের রুমের জ্যোতিষী নিশানাথ বাবু বললেন সারা দিন রঞ্জুর জন্য অপেক্ষা করে কিছুক্ষণ আগে শফিক বেরিয়ে গেছে। নিশানাথ বাবুর ঘরেই রঞ্জু শফিকের ফেরার অপেক্ষা করতে লাগলো।
রাতে শফিক ফিরে রঞ্জুকে তার ঘরে নিয়ে গেলো। পরদিন সকালে মেসের ম্যানেজার রশীদ মিয়ার কাছে রঞ্জুর নাম লিখিয়ে আসলো নতুন মেম্বার হিসেবে। শফিক আর রঞ্জু এক সাথে পড়তো। শফিত পাটটাই চাকরি আর টিউশানির পরে সময় পায়না বলে এবছর ইউনিভার্সিটিতে পড়া ছেড়ে দিয়েছে ।
রঞ্জুদের আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ। পয়সার অভাবে গত তিনটি বছর রঞ্জুর পড়াশুনা বন্ধ ছিল, ছোট বোন পারুলের স্কুলের বেতন দিতে পারছেনা। জমি থেকে সামান্য কিছু আসে। মামারা কিছু দেয়, তাই দিয়ে সংসার চলে।
শফিক রঞ্জুর কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করলো, তার জন্য একটা টিউশানির ব্যবস্থা করলো। দেখতে দেখতে ৫/৬ মাস কেটে গেল। রঞ্জু লক্ষ্য করেছে শফিকের রাতে ঘুম হয় না, ছটফট করে, অনেক রাতে উঠে চা বানিয়ে খায়। শরীর ভেঙ্গে যাচ্ছে, চোখের নিচে কালি।
এদিকে বাড়ি থেকে মার চিঠিতে রঞ্জু জানতে পারে তার বাবার মাথায় সামান্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক শীতের দিনে হঠাৎ করেই তিনি এসে হাজির হন মেসে, রঞ্জু জানতে পারে তার বোনটি নেত্রকোনায় কোন এক ছেলেকে বিয়ে করে চলে গেছে। এদিকে মেসের সবার সাথে খুব খাতির হয়ে যায় রঞ্জুর বাবার। তিনি মেসের এক বোডারের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে চলে যান, সেখানে তার ছোট বনের সাথে শফিকের বিয়েও ঠিক করে আসেন।
রঞ্জু তার পুরনো টিউশানি ছেড়ে দিয়ে নতুন আরেকটি টিউশানি নিয়েছে, শেলী নামের নাইনে পড়ুয়া লাজুক একটি মেয়েকে সে পড়ায়। রঞ্জুর কলেজের বেতন মৌকুফ হয়ে গেছে তাই হাতে কিছু টাকাও থাকে। অন্যদিকে শফিকের চাকরিটা চলে যায়, ফুটপাতে কাপর বেচার একটা ব্যবসা শুরুকরে ধরা খায়, তার শরীর আরও ভেঙ্গে যায়, প্রায় প্রতি রাতেই জ্বর আসে।
অন্য দিকে জ্যোতিষী নিশানাথ বাবুর দিনকাল খুব খারাপ হয়ে পরে, তিনি কয়েক মাসের ভাড়া দিতে পারেন না। একদিন দুপুরে তিনি মেস ছেড়ে চলে যান, তার পরপরই চলে যান মেসের সবচেয়ে বৃদ্ধ মেম্বার। অফিস থেকে কোয়াটার পেয়ে চলে যান আরো একজন মেম্বার।
তিলে তিলে জমানো অল্প কিছু টাকা নিয়ে শফিক প্রস্তুত হয় চায়ের দোকান দেয়ার জন্য। একদিন নিশানাথ বাবু ফিরে আসেন ওদের সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে যেতে, তিনি চলে যাবেন মেঘালয়। রঞ্জুও উঠে যাবে তার ছাত্রী শেলীদের বাড়িতে। এভাবেই খালি হতে থাকে শফিকদের মেস বাড়িটি।

