“বাঁধনহারা” এটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সামাজিক-প্রেমধর্মী উপন্যাস। যা ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
গল্প সংক্ষেপ (বিস্তৃত):
“বাঁধনহারা” কাজী নজরুল ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস, যেখানে তিনি নারীর স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, সমাজের রক্ষণশীলতা এবং প্রেম-সংসারের মধ্যে নারীর অবস্থান নিয়ে একটি গভীর ও সাহসী চিত্র আঁকেন। এই উপন্যাসের মাধ্যমে নজরুল তৎকালীন ভারতীয় সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, গোঁড়ামি এবং নারীর প্রতি বৈষম্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
উপন্যাসের মূল চরিত্র অঞ্জলি- একজন উচ্চশিক্ষিত, আত্মপ্রত্যয়ী এবং সাহসী নারী, যিনি নিজের জীবন সম্পর্কে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে চান। তিনি প্রেমে পড়েন রঞ্জন নামের এক তরুণের, কিন্তু তাদের প্রেমে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজের প্রচলিত মানসিকতা ও নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা। অঞ্জলি এমন একজন নারী যিনি বিশ্বাস করেন, প্রেম মানেই অধীনতা নয়; বরং প্রেমে থাকা সত্ত্বেও একজন নারীর স্বাধীনতা ও সম্মান বজায় থাকা উচিত।
অন্যদিকে, রঞ্জন শুরুতে তার আধুনিক চিন্তাধারাকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেন না। তিনি চায় একটি সাধারণ, ঘরোয়া জীবন—যেখানে স্ত্রী হবে বাধ্য, ভদ্র এবং নিয়ন্ত্রিত। অঞ্জলি এই চিন্তাধারার বিপরীতে অবস্থান নেন এবং এই দ্বন্দ্ব থেকেই উঠে আসে উপন্যাসের মূল সংঘাত।
উপন্যাসজুড়ে আমরা দেখতে পাই, কিভাবে একজন নারী সামাজিক প্রথা, পারিবারিক চাপে এবং প্রেমের আবেগের মধ্যে নিজের অবস্থান, মর্যাদা এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে সংগ্রাম করে।
নজরুল অঞ্জলির কণ্ঠে নারীর মুক্তির কথা বলেছেন। “বাঁধনহারা” নামটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে- এই বাঁধন আসলে সমাজের সেই শৃঙ্খল, যা নারীকে দমিয়ে রাখে। নজরুল এই শৃঙ্খল ভাঙার ডাক দিয়েছেন অঞ্জলির চরিত্রের মাধ্যমে।
মূল ভাবনা ও বার্তা:
-
নারীর আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতা: উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একজন নারীর আত্মমর্যাদা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার। অঞ্জলির মাধ্যমে নজরুল দেখিয়েছেন যে, নারী কেবল প্রেম কিংবা সংসারের জন্যই নয়- তার নিজস্ব স্বপ্ন, চেতনা এবং চিন্তাধারাও রয়েছে।
-
সমাজ ও সংস্কারবিরোধী বিদ্রোহ: “বাঁধনহারা” শুধুমাত্র একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি এক ধরনের প্রতিবাদ-নারীর বিরুদ্ধে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি সাহসী কণ্ঠস্বর।
-
প্রেমে সমতা ও সম্মান: নজরুল দেখিয়েছেন, প্রেম মানে অধীনতা নয়। বরং প্রেমে থাকা উচিত পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমান অধিকার।
উপন্যাসটির গুরুত্ব:
“বাঁধনহারা” উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন। এটি নারীর স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের এক সাহসী উচ্চারণ। তৎকালীন সময়ে নারীর এমন চিত্রায়ন সাহসিকতা ও প্রগতিশীলতার নিদর্শন। এটি শুধু একটি সাহিত্যকর্ম নয়- একটি সামাজিক দলিল, যা আজও নারীর অধিকারের প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক।