৬ জুলাই রোববার পালিত হবে পবিত্র আশুরা—হিজরি ক্যালেন্ডারের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিন। মহররম মাসের ১০ তারিখে সংঘটিত হয়েছে বহু ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঘটনা। এদিন রোজা রাখার ফজিলত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলেও, বিশ্বের নানা স্থানে আশুরাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কিছু প্রচলিত রীতি, যা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বিদআত বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আশুরার দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন:
“আশুরার রোজা অতীত এক বছরের গুনাহর কাফফারা হয়।” — (সহিহ মুসলিম)
তবে রাসুল (সা.) ইহুদিদের অনুকরণ না করতে সাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ বা ১০ ও ১১ তারিখ রোজা রাখতে।
অতিরিক্ত ফজিলতের জন্য কেউ চাইলে ৯, ১০ ও ১১ মহররম—এই তিন দিনও রোজা রাখতে পারেন।
ইসলামে আশুরাকে কেন্দ্র করে কিছু রুসুম-রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর পক্ষে কুরআন-হাদিসে কোনো নির্দেশনা নেই। বরং এগুলো বিদআত বা গোমরাহিতে পরিণত হয়েছে বলে ইসলামী আলেমদের অভিমত।
নিচের আমলগুলো শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়:
১. নিজ শরীরকে ছুরি, চাকু, লাঠি বা ব্লেড দিয়ে আঘাত করা ও রক্তাক্ত করা।
২. তাজিয়া মিছিল বের করা বা কারবালার ঘটনা প্রদর্শন করা।
৩. আলোকসজ্জা ও মোমবাতি প্রজ্বলন।
৪. রণ-মহড়া বা অস্ত্র প্রদর্শন।
৫. আশুরাকে কেন্দ্র করে মুর্সিয়া পাঠ বা শোকসভা আয়োজন।
৬. আশুরার দিন বিয়ে-শাদিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
৭. নির্ধারিত দোয়া বা নামাজ চালু করা।
৮. ‘হালুয়া-রুটি’ বিতরণের উৎসব আয়োজন করা।
৯. বিশেষ খাবার বিতরণ করে আশুরার বরকত হাসিলের চেষ্টা।
এগুলোর কোনোটি রাসুল (সা.) কিংবা সাহাবাদের আমলে ছিল না। বরং অনেক ক্ষেত্রে এগুলো ভ্রান্ত মতবাদ ও কুসংস্কারের প্রতিফলন।
হ্যাঁ, হাদিসে একটি বর্ণনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে:
“যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবার-পরিজনের প্রতি আর্থিক প্রশস্ততা দেখায়, আল্লাহ সারা বছর তাকে সচ্ছল রাখেন।”
— (তাবরানি, বায়হাকি)
👉 অর্থাৎ, ভালো খাবার খাওয়ার আয়োজন করা যায়—তবে তা যেন ধর্মীয় উৎসব বা ফজিলতের আমল মনে করে না হয়।
আশুরা শুধু কারবালার শোক নয়—এটি সত্য, ত্যাগ ও সবরের দিন। নবি মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এদিন। আবার ইমাম হুসাইন (রা.) পরিবারসহ কারবালায় শাহাদাত বরণ করেন—ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই।
আসুন, আশুরার প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করি। অহেতুক আনুষ্ঠানিকতা ও শরিয়তবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিহার করে এই পবিত্র দিনটিকে হাদিস মোতাবেক রোজা, দোয়া, ও তাওবার মাধ্যমে কাটাই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আশুরার প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করে সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। শোকাহত কারবালার শহীদদের জন্য দোয়া ও নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য অন্তর থেকে তাওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।