Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Tue, Dec 16, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » করভিত্তি বাড়াতে ব্যবসা-ব্যক্তিগত লেনদেন নথিভুক্ত করা জরুরি
    মতামত

    করভিত্তি বাড়াতে ব্যবসা-ব্যক্তিগত লেনদেন নথিভুক্ত করা জরুরি

    মনিরুজ্জামানNovember 29, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    বাংলাদেশের কর ব্যবস্থায় বহুদিন ধরেই এক বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। সৎ করদাতারা প্রায়ই বেশি হয়রানি ও চাপের মুখে পড়েন। অন্যদিকে যারা কর ফাঁকি দেন, তারা সহজেই পার পেয়ে যান। এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো কর প্রশাসনের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা।

    মামুন রশীদ, প্রথিতযশা ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার অভাব, সঠিক হিসাব পদ্ধতির ঘাটতি এবং দুর্বল নিরীক্ষা ব্যবস্থা কর ব্যবস্থাকে ন্যায়সংগত হতে দেয়নি। অনেক সময় কর কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা ও অযথাযথ প্রভাব প্রয়োগ, অপ্রয়োজনীয় সরাসরি যোগাযোগ পুরো পরিবেশটিকে অসুস্থ করেছে।

    অন্যদিকে প্রকৃত কর ফাঁকিবাজরা জটিল হিসাব, দুর্বল অডিট এবং সীমিত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহজেই নিয়ম এড়িয়ে যায়। ফলে করভিত্তি বাড়েনি, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে এবং বিনিয়োগ–অবান্ধব পরিবেশ আরও গভীর হয়েছে। মামুন রশীদ মনে করেন, এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য তিনটি কাঠামোগত সংস্কার জরুরি।

    • ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মতো ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট চালু করা, যাতে করদাতা ও কর্মকর্তার সরাসরি যোগাযোগ কমানো যায়।
    • স্বাধীন পেশাজীবীদের মাধ্যমে রিটার্ন সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা।
    • কর অডিট ব্যবস্থাকে তথ্যভিত্তিক ও পেশাদারভাবে পুনর্গঠন করা। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং কর প্রশাসনের মানসিকতা বদল ছাড়া এসব সংস্কার কার্যকর হবে না। এটাই আজকের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।

    কর অফিসে হয়রানি, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত কাটাছেঁড়ার অভিযোগ বহুদিনের। একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ কর ব্যবস্থা গড়তে প্রশাসনিক সংস্কারের কোন দিকগুলোয় এখনই নজর দেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

    বাংলাদেশের কর প্রশাসনে হয়রানি, দুর্নীতি ও অযথা কাটাছেঁড়া দীর্ঘস্থায়ী একটি সমস্যা। এর মূল শেকড় প্রশাসনিক দুর্বলতা, অপ্রয়োজনীয় মানবিক যোগাযোগ এবং দায়বদ্ধতার অভাবে রোপিত। একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ কর ব্যবস্থা গড়তে এখনই যেসব সংস্কারে নজর দেয়া জরুরি, তার প্রথমটি হলো ডিজিটালাইজেশনকে বাধাহীনভাবে এগিয়ে নেয়া। বিশেষত ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট বা অনলাইন মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার বিস্তার। এতে করদাতা-অফিসারের সরাসরি সম্পর্ক কমবে, যা দুর্নীতি কমানোর পাশাপাশি ন্যায্যতা বাড়াবে।

    দ্বিতীয়ত, কর প্রশাসনের ভেতরে দায়বদ্ধতার কাঠামো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কোন কর্মকর্তা কোন সিদ্ধান্ত নিলেন, তার প্রামাণ্য ব্যাখ্যা এবং নিরীক্ষাযোগ্য নথি থাকা উচিত। এটি কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা নয়, বরং সুশাসন নিশ্চিত করার উপায়।

    তৃতীয়ত, কর ব্যবস্থায় যোগ্যতা ও পেশাদারত্বের অভাব কাটাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ, আধুনিক অডিট কৌশল এবং আর্থিক বিশ্লেষণে সক্ষম মানবসম্পদ নিয়োগ জরুরি। কর ফাঁকি শনাক্তকরণ কেবল আইনি বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি উচ্চতর হিসাববিদ্যা ও বিশ্লেষণমূলক কাজ। সবচেয়ে বড় কথা, পুরো ব্যবস্থায় করদাতাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে। করদাতাকে শত্রু নয়, বরং রাষ্ট্রের অংশীদার হিসেবে দেখা—এ মানসিকতাই ভবিষ্যৎ কর সংস্কারের ভিত্তি হতে পারে।

    করভিত্তি বাড়াতে না পারায় দেশ এখনো পরোক্ষ করের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। করভিত্তি সম্প্রসারণে প্রধান বাধাগুলো কী এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে চাপ না বাড়িয়ে কীভাবে এগুলো দূর করা যায়?

    বাংলাদেশ বহু বছর ধরে করভিত্তি বাড়াতে সংগ্রাম করছে। এর পরিণামে রাজস্ব কাঠামো পরোক্ষ করনির্ভর হয়ে উঠেছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে তুলনামূলকভাবে বেশি চাপে ফেলে। করভিত্তি সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় বাধা হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ব্যাপকতা, নির্ভরযোগ্য আর্থিক তথ্যের অভাব এবং কর প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা। ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়াকে সহজ করা, হিসাবপত্রের মান, এমনকি ব্যাংকিং লেনদেনের স্বচ্ছতা—সবকিছুতেই ঘাটতি রয়েছে, যা অনেক সম্ভাব্য করদাতাকে সিস্টেমের বাইরে ঠেলে দেয়। পাশাপাশি কর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত জন-যোগাযোগভিত্তিক প্রক্রিয়া এবং অপ্রয়োজনীয় জটিলতা নতুন করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। ফলে এক ধরনের ভীতি বা অনীহার কারণে করদাতার সংখ্যা যতটা বাড়ার কথা ছিল ততটা বাড়ছে না।

    করভিত্তি বাড়াতে হলে প্রথমে ব্যবসা ও ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনকে যতটা সম্ভব ডিজিটাল ও নথিভুক্ত করতে হবে। মানুষকে কর-নেটের মধ্যে আনার প্রধান উপায় শাস্তি নয়, উদ্দীপনা। ছোট ব্যবসার জন্য সহজ রিটার্ন, প্রাথমিক কয়েক বছরে কম হারে কর বা স্বেচ্ছা-ঘোষণার সুযোগ কার্যকর হতে পারে। দ্বিতীয়ত, কর কর্মকর্তার সঙ্গে করদাতাদের সরাসরি যোগাযোগ কমিয়ে ফেসলেস ব্যবস্থা প্রসারিত করতে হবে। এতে আস্থা বাড়বে ও হয়রানি কমবে।

    সবশেষে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর চাপ না বাড়িয়ে করভিত্তি প্রসারিত করতে হলে উচ্চ আয়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক অংশ, বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট, পাইকারি বাণিজ্য, পেশাজীবী সেবা খাত—এসবকে ধীরে ধীরে নথিভুক্ত ও কর-সম্পৃক্ত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও আস্থা—এ দুই ভিত্তিই করভিত্তি সম্প্রসারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    বৃহৎ করদাতা ইউনিট আধুনিক কর ব্যবস্থার জন্য গঠিত হলেও এখন তা আর নিয়মিত কর সার্কেলের চেয়ে আলাদা নয়। এলটিইউ মডেল ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী এবং এটি কী পুনর্গঠন করা সম্ভব?

    বাংলাদেশে বৃহৎ করদাতা ইউনিট বা লার্জ ট্যাক্সপেয়ার্স ইউনিট (এলটিইউ) গঠনের (যার সঙ্গে আমি নিজেও কিছুটা জড়িত ছিলাম) মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহৎ করদাতাদের জন্য দ্রুত, আধুনিক ও ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করা। যেখানে দক্ষ কর্মকর্তা, প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া এবং স্বতন্ত্র কাঠামো একসঙ্গে কাজ করবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এলটিইউ তার বিশেষায়িত চরিত্র হারিয়ে সাধারণ কর সার্কেলের মতো আচরণ করতে শুরু করে। এ ব্যর্থতার প্রথম কারণ হলো কৌশলগত দিকনির্দেশনার অভাব। এলটিইউকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ভাবার পরিবর্তে একে নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় আটকে ফেলা হয়েছে।

    দ্বিতীয়ত, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা, যা এলটিইউর প্রাণশক্তি হওয়ার কথা ছিল, তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। বিশেষায়িত স্টাফিং, প্রশিক্ষণ এবং ডাটাভিত্তিক নিরীক্ষা না থাকায় ইউনিটটি তার স্বকীয়তা হারায় এবং তৃতীয়ত, বড় করদাতাদের জটিল লেনদেন বিশ্লেষণে যে উন্নত অডিট কাঠামো দরকার, তা গড়ে ওঠেনি। ফলে বৃহৎ করদাতারা এলটিইউ থেকে বিশেষায়িত সেবার যে প্রত্যাশা করেছিলেন, তা পূরণ হয়নি।

    তবে এলটিইউ পুরোপুরি ব্যর্থ কোনো মডেল নয়। এটি পুনর্গঠনযোগ্য। স্পষ্ট ম্যান্ডেট, স্বাধীন কার্যপরিধি, দক্ষ অডিট টিম এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুললে এলটিইউ আবারো কার্যকর হতে পারে। ভারতের মতো দেশে এলটিইউ শক্তিশালী হয়ে রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও এটি কার্যকর করা সম্ভব, যদি আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক সাহস থাকে।

    অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখনো সঠিকভাবে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে না। স্বাধীন পেশাজীবীদের মাধ্যমে কর রিটার্ন যাচাই বা সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করলে কি স্বচ্ছতা বাড়বে? এ ক্ষেত্রে কী কী ঝুঁকি রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

    বাংলাদেশের বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখনো গ্রহণযোগ্য মানের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে না, যা কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ প্রেক্ষাপটে স্বাধীন পেশাজীবীদের মাধ্যমে কর রিটার্ন যাচাই বা সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা হলে স্বচ্ছতা নিঃসন্দেহে বাড়বে। কারণ এটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক হিসাবরক্ষণ, আয়-ব্যয়ের যথাযথ নথিভুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিপোর্ট প্রস্তুত করতে প্রণোদিত করবে। কর প্রশাসনও একটি যাচাইকৃত তথ্যভাণ্ডার পাবে, যা কর নির্ধারণ ও ঝুঁকি বিশ্লেষণকে আরো নির্ভুল করবে।

    তবে এ ব্যবস্থার কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। প্রথমত, যদি সার্টিফায়িং পেশাজীবীদের মান, সততা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না করা যায়, তবে একটি নতুন ধরনের ‘সার্টিফিকেশন ব্যবসা’ জন্ম নিতে পারে। যেখানে প্রকৃত যাচাইয়ের বদলে কাগজপত্রে আনুষ্ঠানিকতা পূরণই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে। দ্বিতীয়ত, ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিরিক্ত খরচের চাপ তৈরি হতে পারে, যা তাদের অনানুষ্ঠানিকতার দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং তৃতীয়ত, কর প্রশাসন যদি এ সার্টিফিকেশনকে গুরুত্ব না দেয় এবং একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন তোলা অব্যাহত রাখে, তবে পুরো উদ্যোগই অকার্যকর হয়ে যাবে। সুতরাং স্বচ্ছতা বাড়াতে সার্টিফিকেশন কার্যকর উপায় হলেও এটি সফল করতে হলে যোগ্য পেশাজীবী, কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং কর প্রশাসনের মানসিকতার পরিবর্তন—সবকিছুই একসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।

    কর অডিট দেশের অন্যতম দুর্বল ক্ষেত্র। কীভাবে অডিট ব্যবস্থাকে আরো পেশাদার, স্বাধীন এবং তথ্যভিত্তিক করা যেতে পারে?

    বাংলাদেশের কর অডিট দীর্ঘদিন ধরেই দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার প্রতীক। অডিটের ওপর আস্থা নেই, পেশাদারত্ব কম এবং সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়। অথচ একটি আধুনিক রাজস্ব ব্যবস্থার প্রাণই হলো শক্তিশালী, স্বাধীন ও তথ্যভিত্তিক অডিট কাঠামো। এটি গড়ে তুলতে প্রথমেই প্রয়োজন ঝুঁকিভিত্তিক অডিট সিস্টেম চালু করা। যেখানে অডিটের নির্বাচন হবে তথ্য, ব্যতিক্রমী লেনদেন, আর্থিক অনুপাত ও আচরণগত বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে, কোনো ব্যক্তির বিবেচনার ওপর নয়।

    দ্বিতীয়ত, অডিট বিভাগকে প্রশাসনিকভাবে স্বাধীন করতে হবে। যারা অডিট করবেন, তারা যেন মূল্যায়নকারী অফিসের বাইরে থেকে নিয়োগ বা রোটেশনের মাধ্যমে আসেন। যাতে স্বার্থসংঘাত কমে ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। তৃতীয়ত, অডিট কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং, ডিজিটাল অডিট টুল এবং ডাটা অ্যানালিটিকস—এ বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি। শুধু আইনের ভাষা জানা যথেষ্ট নয়, জটিল ব্যবসায়িক লেনদেন বোঝার ক্ষমতাই সফল অডিটের ভিত্তি।

    এছাড়া অডিট প্রতিবেদনের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেমপ্লেট, অনলাইন অডিট ট্রেল এবং প্রতিটি সিদ্ধান্তের নথিভুক্ত ব্যাখ্যা রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং করদাতার আস্থা ফিরে আসবে। সবশেষে অডিটকে শাস্তিমূলক নয়—করদাতা উন্নয়ন ও সঠিক রিপোর্টিং সংস্কৃতি তৈরির অংশ হিসেবে দেখতে হবে। উন্নত অডিটই রাজস্ব ব্যবস্থাকে টেকসই করবে।

    ফেসলেস অ্যাসেসমেন্টের প্রধান সুফল হলো দুর্নীতি হ্রাস, দ্রুততর সেবা এবং করদাতা-অফিসারের সরাসরি যোগাযোগ কমে যাওয়া। বাংলাদেশে এ সুবিধাগুলোর কোনটি দ্রুত অর্জন করা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

    ফেসলেস অ্যাসেসমেন্টের তিনটি প্রধান সুফল হলো—দুর্নীতি হ্রাস, দ্রুততর সেবা এবং করদাতা-কর্মকর্তা মুখোমুখি যোগাযোগ কমে যাওয়া। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্প সময়ে সবচেয়ে দ্রুত অর্জন করতে পারে দুটি সুবিধা: (১) অপ্রয়োজনীয় সরাসরি যোগাযোগ কমানো এবং (২) সেবার গতি বাড়ানো। কারণ এ দুই ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনই মূল চালিকাশক্তি, যেখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অল্প সময়ে অগ্রগতি সম্ভব। আমাদের দেশে করদাতাদের বড় অভিযোগ হলো—কর অফিসে ঘন ঘন যেতে হয়, অকারণ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটিই অনিশ্চয়তায় ভরা। ফেসলেস সিস্টেম যদি সীমিত পরিসরে হলেও চালু করা যায়—যেমন রিটার্ন স্ক্রুটিনি, প্রাথমিক প্রশ্নোত্তর, কিছু নির্বাহী মূল্যায়ন। তাহলে করদাতার সঙ্গে কর্মকর্তার সরাসরি যোগাযোগ কমে যাবে। এতে হয়রানি কমবে এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।

    দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া চালু হলে সেবা প্রদানের গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাড়বে। ফাইলের শারীরিক চলাচল, ম্যানুয়াল অনুমোদন, কিংবা ‘ফাইলে সই আটকানো’র মতো দুর্বলতা দ্রুত কমে যাবে। ই-পোর্টাল, স্বয়ংক্রিয় নোটিস, অনলাইন ডকুমেন্ট সাবমিশন—এসব দেশের বিদ্যমান আইটি সক্ষমতায় খুব বেশি জটিল নয়। তবে দুর্নীতি কমানো একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, কারণ এটি কেবল প্রযুক্তির নয়, মানসিকতা, দায়বদ্ধতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের বিষয়।‌ অতএব ফেসলেস অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেবা দ্রুততা ও যোগাযোগহীনতা—এ দুই লক্ষ্যে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।

    যথাযথ কর সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনের সহযোগিতা অপরিহার্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনি কী মনে করেন, আমাদের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা এ সংস্কারের জন্য প্রস্তুত?

    কর সংস্কার মূলত দুই স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। একটি হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আরেকটি প্রশাসনিক সক্ষমতা ও সহযোগিতা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দুই উপাদানের প্রস্তুতি আছে কিনা, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিকভাবে কর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। বিশেষ করে রাজস্ব সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং উন্নয়ন ব্যয়ের বাস্তবতা সামনে আসায়। তবে এ সচেতনতা কার্যকর ‘সদিচ্ছা’তে রূপ নিতে হলে সরকারকে স্পষ্টভাবে দীর্ঘমেয়াদি কর-রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে, যেখানে ধাপে ধাপে কাঠামোগত সংস্কারের নির্দেশনা থাকবে। কেবল নীতিগত বক্তব্য যথেষ্ট নয়, কার্যকর ফলাফল দেখতে চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক অনমনীয়তা ভাঙতে হবে।

    অন্যদিকে প্রশাসনিক স্তরে এখনো পুরনো প্রক্রিয়া, রুটিনমাফিক কাজের ধারা এবং ব্যক্তি যোগাযোগনির্ভর সিদ্ধান্তই প্রধান প্রতিবন্ধকতা। কর সংস্কার মানে শুধু একটি আইন বদলানো নয়—এটি একটি মানসিকতার পরিবর্তন, যা এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। প্রযুক্তি গ্রহণ, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও পেশাদারত্ব—এ চার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাঠামোকে আরো শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। অতএব প্রস্তুতি আংশিকভাবে আছে, কিন্তু তা পূর্ণাঙ্গ নয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি দৃঢ় অবস্থানে দাঁড়ায় এবং প্রশাসন যদি একটি সংস্কারমনস্ক রূপে পরিবর্তিত হতে সাহসী হয়, তাহলেই কেবল কর সংস্কার সম্ভব। না হলে এ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আবারো কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

    বাংলাদেশে অনেক সংস্কার উদ্যোগই মাঝপথে থেমে যায় বা স্থায়ী রূপ পায় না। নীতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জরুরি?

    বাংলাদেশে নীতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে সংস্কার কোনো একক ব্যক্তির সদিচ্ছা বা কোনো নির্দিষ্ট সরকারের আগ্রহে টিকে থাকে না। এটি টিকে থাকে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, রাজনৈতিক ঐকমত্য ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের দেশে অনেক সংস্কারই শুরু হয় জোরেশোরে, কিন্তু মাঝপথে সেই গতি কমে আসে। কারণ নতুন নেতৃত্ব এলে অগ্রাধিকার বদলে যায়, কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন দুর্বল হয়ে পড়ে।

    নীতির ধারাবাহিকতা টেকসই করতে তিনটি ব্যবস্থা জরুরি বলে মনে হয়। প্রথমত, আইনি ভিত্তি: বড় ধরনের কর, আর্থিক বা প্রশাসনিক সংস্কারকে আইন ও বিধিমালা দিয়ে এমনভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে, যাতে নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেও সেটি চলমান থাকে। দ্বিতীয়ত, স্বাধীন পর্যবেক্ষণ সংস্থা: বাজেট সংস্কার, কর প্রশাসন, ডিজিটাল রূপান্তর—এসব ক্ষেত্রে একটি প্রযুক্তিনির্ভর, ডাটাভিত্তিক এবং পার্লামেন্টে দায়বদ্ধ মনিটরিং ইউনিট গড়ে তুলতে হবে, যারা অগ্রগতি যাচাই করবে এবং প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করবে। তৃতীয়ত, সুশাসন ও আমলাতান্ত্রিক সক্ষমতা: দক্ষ, স্থায়ী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত আমলাতন্ত্র ব্যতীত কোনো সংস্কারই টেকে না। সব মিলিয়ে বলতে হয়—ব্যক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নয়, বরং প্রতিষ্ঠাননির্ভর কাঠামোই টেকসই নীতি ধারাবাহিকতার আসল ভিত্তি। সংস্কারের সাফল্য তাই প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিমত্তার ওপরই শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে।

    আপনি তাৎক্ষণিকভাবে কোন তিনটি কর সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে চান এবং কেন?

    তাৎক্ষণিক কর সংস্কারের অগ্রাধিকার বাছাই করতে হলে আমাদের একদিকে রাজস্ব ঘাটতির বাস্তবতা, অন্যদিকে কর প্রশাসনের দুর্বলতা—দুটিকেই বিবেচনায় নিতে হবে। আমার মতে, দ্রুত ও সর্বাধিক প্রভাব ফেলতে সক্ষম যে তিনটি সংস্কার অবিলম্বে নেয়া উচিত, সেগুলো হলো করভিত্তি সম্প্রসারণ, প্রশাসনিক আধুনিকীকরণ এবং করদাতা ও আয়কর বিভাগের অফিসারদের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণ।

    প্রথমত, করভিত্তি সম্প্রসারণ: বর্তমানে আমাদের দেশে আয়কর দাতার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ রিটার্ন জমা দেন না। আর রিটার্ন জমা দেন ৪০-৪৫ লাখের মতো। তার মানে প্রায় ৭০ লাখ বা তারও বেশি আয়করদাতা সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। আমরা যদি এ অংশটিকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের রাজস্ব আদায় আরো বহু গুণে বেড়ে যাবে। তাছাড়া হাই-নেট-ওয়ার্থ ব্যক্তিদের সঠিক প্রোফাইলিং, সম্পদ-আয় মিলিয়ে দেখা এবং ডিজিটাল লেনদেন বিশ্লেষণ—তিনটিকে যুক্ত করলে করভিত্তি দ্রুত বাড়তে পারে।

    দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক আধুনিকীকরণ: আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক—তিনটি খাতে সমন্বিত ডাটা প্লাটফর্ম তৈরি করা জরুরি। এলটিএস, কোম্পানি সার্কেল, ভ্যাট কমিশনারেট—এসব এখনো বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে। তথ্য সমন্বয় হলে অডিট উন্নত হবে, রাজস্ব ফাঁকি কমবে এবং সিদ্ধান্ত হবে ডাটাচালিত।

    তৃতীয়ত, ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট ও অডিট সম্প্রসারণ: করদাতা ও কর্মকর্তার সরাসরি যোগাযোগ কমানোর মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো যায় এবং প্রক্রিয়া আরো পূর্বানুমানযোগ্য হয়। ভারতসহ বহু দেশে এর সফলতা প্রমাণিত। আংশিকভাবে শুরু হলেও বাংলাদেশে এর পরিধি বাড়ানো এখন জরুরি। সব মিলিয়ে এ তিনটি সংস্কার দ্রুত আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে এবং মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সূত্র: বণিক বার্তা

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি দ্বিগুণ বৃদ্ধি

    December 15, 2025
    মতামত

    এই সরকারের আমলে গায়েবি মামলার শিকারদের কে মুক্তি দিবে?

    December 15, 2025
    মতামত

    বুদ্ধিজীবী হত্যা: দেশের ভবিষ্যত নাশের কৌশল

    December 15, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.