শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনুযায়ী নভেম্বর শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। সাধারণত অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষ দিক থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়। ছাত্রছাত্রীরা সারাবছর লেখাপড়ার জন্য যতটা শ্রম দেয়, তার মূল্যায়ন হয় বার্ষিক পরীক্ষার ফল দিয়ে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে বা শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় যথেষ্ট মনোসংযোগ করতে পারছে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
১৭ নভেম্বর সূত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক, অভিভাবকদের উদ্বেগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এর প্রতিফলন দেখা গেছে। মূলত আওয়ামী লীগের শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর দেশে জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি আমরা দেখেছি।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে? চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে এবং আগামী নির্বাচন পর্যন্ত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব তাদের ওপরেই বর্তায়। মানুষ আশা করেছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অন্তত জ্বালাও-পোড়াও বা অগ্নিসন্ত্রাসের সংস্কৃতি থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু সে আশা দুরাশা। বরং যানবাহনে আগুন লাগানো, যত্রতত্র বোমাবাজি আর সড়ক অবরোধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শিক্ষাঙ্গনে। সারাবছর ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলের আশায়। সেই পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশে অস্থিরতা বাড়ছে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের দাবিদাওয়া, আন্দোলন ঘিরে শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত।
রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার এই যে সংস্কৃতি আমাদের এখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, সেই বৃত্ত থেকে আমরা কেন বের হতে পারছি না? এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক; সবাই আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এসব বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলার প্রবণতা, তা থেকে কি আমরা বেরিয়ে আসতে পারব না?
- মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। সূত্র: সমকাল

