কৃষি মৌসুমে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ নতুন নয় কিন্তু মুন্সিগঞ্জে এ সমস্যা এখন উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। আলু আবাদ মৌসুমের চূড়ান্ত সময়ে যখন কৃষকের সবচেয়ে বেশি সারের প্রয়োজন তখনই একশ্রেণির ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে বাজার অস্থির করে তুলেছেন। সরকারি ভর্তুকির সার কৃষকের কাছে স্বস্তির হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটিই বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সূত্র সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে, মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চিত্র। সরকারি হিসাব অনুযায়ী জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে এবং সরবরাহব্যবস্থাও সচল। তবু মাঠপর্যায়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। দাম বেশি কেন জানতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রে কৃষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে মেমো দেওয়া হচ্ছে না এবং ‘সার নেই’ বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনার সমষ্টি স্পষ্ট করে দেয় যে এটি প্রকৃত সংকট নয় বরং নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের কারসাজি।
প্রশাসন মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে সাময়িকভাবে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরে দামও কিছুটা কমে আসে। কিন্তু অভিযান শেষ হলেই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এতে বোঝা যায় নজরদারি প্রতিক্রিয়ামূলক ও স্বল্পমেয়াদি থেকে যাচ্ছে এবং কাঠামোগত দুর্বলতা অক্ষতই রয়ে যাচ্ছে।
কৃষির মতো সংবেদনশীল খাতে এই ধরনের ঢিলেঢালা তদারকি কৃষকের আস্থা নষ্ট করছে। একজন কৃষক সরকারি দামে সার কিনে উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব করেন কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ করেই তার খরচ বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে খাদ্যের বাজারে মূল্যস্ফীতিতে এবং শেষ পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতিতে।
এ অবস্থায় শুধু অভিযান যথেষ্ট নয় প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যারা সিন্ডিকেট করে কৃষকদের জিম্মি করছে তারা ডিলার হোক বা খুচরা বিক্রেতা তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল মজুত জব্দ এবং নিয়মিত মামলার মাধ্যমে কঠোর শাস্তির নজির স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে সার সরবরাহের পুরো শৃঙ্খল আমদানিকারক থেকে ডিলার ও খুচরা পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনতে হবে যাতে কাগজে-কলমে পর্যাপ্ত মজুত আর মাঠে কৃত্রিম সংকটের বৈপরীত্য আর না থাকে।
মুন্সিগঞ্জের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। তা না হলে ভর্তুকির সুফল যাবে অসাধুদের হাতে আর মাঠে ঘাম ঝরানো কৃষকই থেকে যাবেন অসহায় অবস্থায়।
সূত্র: প্রথম আলো

