অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পুঁজিবাজারের অস্থিরতা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, এটি বিনিয়োগকারীদের কারণে নয় বরং পুঁজিবাজারের প্লেয়ার ও নিয়ন্ত্রকদের (রেগুলেটর) অবহেলার ফল। তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারের এই অস্থিরতার পেছনে প্লেয়ার এবং রেগুলেটরদের অনেক দায় রয়েছে।”
আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্যাংকিং অ্যালমানাকের ষষ্ঠ সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীরা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যেগুলোর কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই। অথচ এসব শেয়ার কিনে তারা আনন্দিত হচ্ছেন। কিন্তু এই শেয়ারগুলো খুব শিগগিরই মূল্যহীন হয়ে পড়বে এবং কেবল কাগজের টুকরো হয়ে যাবে।”
তিনি আরও জানান, “বিবিএসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যা তথ্য রয়েছে তা-ই প্রকাশ করা হোক। এখানে কারচুপির কোনো বিষয় নেই। আমাদের ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতের মতো পুঁজিবাজারের অবস্থাও একই রকম। অতীতে এখানে অনেক তথ্য লুকানো হয়েছিল কিন্তু আমরা সেগুলোকে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি।”
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা কোনো ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য আসিনি বরং একটি দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। বিগত ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে এবং সেগুলোর মধ্যে অনেক কিছু লুকানো হয়েছে। আমরা সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের দাতা সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছে এবং আমরা তাদের বুঝিয়ে বলছি যে, পূর্বের তথ্যগুলো ভুল ছিল।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। যাতে ব্যবসায়ীরা এক জায়গা থেকেই সব তথ্য পেতে পারেন। ব্যবসায়ীদের যাতে ১০টি জায়গায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে না হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তথ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে না করা যায়, তবে ভবিষ্যতে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। আমাদের মিথ্যা তথ্যের কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ মিথ্যা কখনো স্থায়ী হয় না।”
ব্যাংকিং অ্যালমানাকের ষষ্ঠ সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকিং অ্যালমানাকের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সিকদার, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, গ্রন্থটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সৈয়দ জিয়া উদ্দিন আহমেদ এবং আব্দার রহমান প্রমুখ।
অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “আমরা আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। এতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা জরুরি, যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়েছে।”
ব্যাংকিং অ্যালমানাকের এক্সিকিউটিভ এডিটর সৈয়দ জিয়া উদ্দিন আহমেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকিং অ্যালমানাকের বোর্ড অব এডিটরস-এর সম্মানিত সদস্য অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন গ্রন্থটির প্রয়োজনীয়তা এবং তাৎপর্য নিয়ে একটি বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ব্যাংকিং অ্যালমানাকের ষষ্ঠ সংস্করণে দেশের ব্যাংকিং সেবা এবং বৈচিত্র্যের তথ্য-উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা দেশের জনগণের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

