গত সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে মোট লেনদেনের অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে চার খাতে। এর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৩৮৯ কোটি, বস্ত্র খাতে ২৫৪, প্রকৌশল খাতে ২২৪ এবং ব্যাংক খাতে ২০৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সব মিলিয়ে এ চার খাতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। এ সময়ে লেনদেনের পাশাপাশি সূচকও ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর প্রান্তিক আর্থিক ফলাফলকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড কমার কারণে সামনে নীতি সুদহার কম থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শুরুতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৩৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫ হাজার ১৩৪ পয়েন্ট। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৯ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৮৯৪ পয়েন্ট।
ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ১৫১ পয়েন্ট। ডিএসইর বাজার মূলধন সপ্তাহের শুরুতে ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, সপ্তাহ শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেনে গত সপ্তাহে ওষুধ ও রসায়ন খাতের আধিপত্য ছিল। লেনদেনচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে প্রকৌশল খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে ছিল তথ্য ও প্রযুক্তি খাত।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে পাঁচটি বাদে বাকি সব খাতের শেয়ারেই ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন ছিল বস্ত্র ও সিরামিক খাতে। এ দুই খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫৭ ও ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে গত সপ্তাহে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে।
তাছাড়া এ সময় মিউচুয়াল ফান্ডে দশমিক ৯৮ ও জীবন বীমা খাতে দশমিক ৭২ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন ছিল। গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, কোহিনূর কেমিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও এডিএন টেলিকমের শেয়ারের।
গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন বেড়েছে ১৭৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত সপ্তাহে টাকার অংকে ডিএসইর গড় লেনদেনও বেড়েছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে গড় লেনদেন হয়েছে ৪১৩ কোটি টাকা। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে গড় লেনদেন ছিল ৩৭৮ কোটি টাকা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৫ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৯৭টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২০১টির, কমেছে ১৫০টির, অপরিবর্তিত ছিল ৪৬টির। লেনদেন হয়নি ১৬টির।

