দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। গত সপ্তাহে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে এক্সচেঞ্জটির গড় লেনদেন বেড়েছে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচক ৬৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫ হাজার ১১৩ পয়েন্টে। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৯০৪ পয়েন্টে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ১৩৪ পয়েন্টে। ডিএসইর বাজার মূলধন সপ্তাহের শুরুতে ছিল ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, সপ্তাহ শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩১ কোটি টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন বেড়েছে ৯ হাজার ১০৬ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। এ সময় ডিএসইতে মোট ২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন বেড়েছে ৪৩৮ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ। গত সপ্তাহে টাকার অংকে ডিএসইর গড় লেনদেনও বেড়েছে। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে গড় লেনদেন হয়েছে ৪২৭ কোটি টাকা। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে গড় লেনদেন ছিল ৩৩৯ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির গড় লেনদেন বেড়েছে ৮৮ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৬৫টির, কমেছে ১০৩টির, অপরিবর্তিত ছিল ২৭টির। আর লেনদেন হয়নি ১৮টির।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি ট্রেজারি বন্ডের ইল্ড কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়েছে। তার ওপর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক ফলাফল প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হওয়ার কারণেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ব্যাংকসহ ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কোম্পানিগুলোর আসন্ন আর্থিক ফলাফলকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে গত সপ্তাহে সূচকের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।
খাতভিত্তিক লেনদেনে গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতের আধিপত্য ছিল। লেনদেনচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ওষুধ ও রসায়ন খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে ছয়টি বাদে বাকি সব খাতের শেয়ারেই ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন ছিল সেবা ও আবাসন খাতে ৪ দশমিক ৭৪ ও জীবনবীমা খাতে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে গত সপ্তাহে পাট খাতে সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে।
গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার, প্রাইম ব্যাংক ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের।

