২০২৫ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি ব্যাংকের নিট মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি ও উত্তরা ব্যাংক পিএলসি এই চারটি ব্যাংকই মুনাফা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল সিটি ব্যাংক পিএলসি যাদের নিট মুনাফা সামান্য পরিমাণে কমেছে। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ব্র্যাক ব্যাংক চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন মাসে সুদ থেকে আয় করেছে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে কর পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪৮৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকায়, যেখানে আগের বছর ছিল ৩১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৫৩ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ২৭ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৫৪ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকা ৫ পয়সা।
ইস্টার্ন ব্যাংকও চলতি প্রান্তিকে মুনাফা বাড়িয়েছে। ব্যাংকটি সুদ আয় করেছে ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছর ছিল ৮২৪ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৫৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৪৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ফলে বছরে নিট মুনাফা বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ইস্টার্ন ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১৪ পয়সা, যা গতবার ছিল ১ টাকা ৭ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৩ পয়সা।
মিডল্যান্ড ব্যাংকের পারফরম্যান্সও ইতিবাচক ছিল। ব্যাংকটি সুদ থেকে আয় করেছে ১৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা—এটি ৪০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। এই প্রান্তিকে মিডল্যান্ড ব্যাংকের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১৬ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১২ পয়সা। এনএভিপিএস ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ১৫ টাকা ২৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
উত্তরা ব্যাংকের ক্ষেত্রে মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৪৬ পয়সা, যেখানে আগের বছর ছিল মাত্র ৬৮ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত উত্তরা ব্যাংকের এনএভিপিএসও দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকা ৫ পয়সায়।
অন্যদিকে, সিটি ব্যাংক এই প্রান্তিকে কিছুটা ব্যতিক্রম থেকে গেছে। ব্যাংকটির সুদ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকায়, যা আগের বছরে ছিল ৯৪৯ কোটি টাকা। তবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা সামান্য হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৯২ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ৯২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফলে নিট মুনাফা কমেছে দশমিক ৪০ শতাংশ। ইপিএস ছিল অপরিবর্তিত ৬৮ পয়সাই রয়েছে গত বছরের মতো। এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৩৩ পয়সায়।
প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে নিট মুনাফার এই প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও সুদ আয়ের উন্নয়নকে নির্দেশ করে। তবে সিটি ব্যাংকের মতো কিছু প্রতিষ্ঠানের মুনাফা স্থবিরতা ভবিষ্যৎ প্রবণতা পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।

