দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের লেনদেন গত সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৫২ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা যা তার আগের সপ্তাহের ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার তুলনায় প্রায় ২৬ দশমিক ৪২ শতাংশ কম। যদিও চলতি বছরজুড়ে খাতভিত্তিক লেনদেনে ব্যাংক খাত প্রায়শই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই খাতের লেনদেনে এই বড়সড় পতন বিশেষ নজর কাড়ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭৮৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্ট। ডিএসই-৩০ সূচকও বেড়েছে ৭ পয়েন্ট, যার বর্তমান অবস্থান ১ হাজার ৭৭৭ পয়েন্ট। একইভাবে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ৮ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৭ পয়েন্টে।
ডিএসইতে মোট ৩৯০টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ড লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ২৩২টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টির দর। এছাড়া ২৩টি কোম্পানির কোনো লেনদেন হয়নি। সপ্তাহজুড়ে সূচকের ঊর্ধ্বগতিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, এইচআর টেক্সটাইল, শাইনপুকুর সিরামিকস, বীকন ফার্মা এবং বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকসের শেয়ার। আলোচ্য ছয় কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭২২ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাত মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ দখলে রেখে শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত, যার লেনদেন ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের লেনদেন ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ, চতুর্থ স্থানে থাকা বস্ত্র খাতের ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং পঞ্চম স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ইতিবাচক রিটার্নের দিক থেকে এগিয়ে ছিল চামড়া প্রতিষ্ঠান খাত, যেখানে রিটার্ন ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরই রয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাত (৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ), বস্ত্র খাত (৩ দশমিক ১ শতাংশ) এবং সিরামিক খাত (২ দশমিক ৯৬ শতাংশ)। অন্যদিকে, নেতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল টেলিযোগাযোগ খাত, যেখানে পতনের হার ছিল ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত (৩ দশমিক ১৯ শতাংশ), মিউচুয়াল ফান্ড (২ দশমিক ৬১ শতাংশ), করপোরেট বন্ড (১ দশমিক ৬১ শতাংশ) এবং ব্যাংক খাত (১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ)।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই গত সপ্তাহে দশমিক ৬৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে, যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ১৩ হাজার ৪৭৭ পয়েন্ট। সিএসসিএএক্স সূচকও কমেছে দশমিক ৮০ শতাংশ, যা বর্তমানে ৮ হাজার ১৭৪ পয়েন্টে, আগের সপ্তাহে ছিল ৮ হাজার ২৪০ পয়েন্ট।
সিএসইতে গত সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। মোট ৩১৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশ নেয় যার মধ্যে ১৪৩টির দর বেড়েছে, ১৪৯টির কমেছে এবং ২৫টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারে সূচক কিছুটা বেড়েছে এবং লেনদেনেও বৃদ্ধি দেখা গেলেও খাতভিত্তিক চিত্র বলছে, ব্যাংকসহ কিছু প্রধান খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি ইতিবাচক রিটার্ন পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোট ও মাঝারি শিল্প সংশ্লিষ্ট খাত যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগের দিক নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

