সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোকে সরাসরি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন । এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই গত সোমবার রেলভবনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম গতকাল মঙ্গলবার জানান, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় লাভজনক ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই বৈঠক হয়। তিনি বলেন, এ ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে তা আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী হবে বলে বিএসইসি মনে করে।
এর আগে গত ১১ মে যমুনায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও উন্নয়নকল্পে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন। সেই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে বিএসইসি।
তবে এই উদ্যোগ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে। প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “নীতিনির্ধারণে স্থায়িত্ব না থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হয় না। তিতাস গ্যাসের উদাহরণই দেখুন—তালিকাভুক্তির পর হঠাৎ নীতি পরিবর্তনে কোম্পানির আয় অর্ধেকে নেমে আসে। শেয়ারদর ৭০ টাকা থেকে কমে দাঁড়ায় ৪০ টাকায়। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন।”
তিনি আরও বলেন, “সব সরকারি কোম্পানি বিনিয়োগের উপযুক্ত নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে অর্থ জমা রাখে, কিন্তু শেয়ার ইস্যু করে না। কেউ কেউ ১০–১৫ বছর পর এসে ন্যূনতম মূল্যে শেয়ার ইস্যু করে। এতে বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে না।”
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি পুঁজিবাজারকে গভীরতা দিতে পারে। তবে শুধু তালিকাভুক্ত করলেই হবে না—বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে দরকার স্বচ্ছতা, ধারাবাহিক নীতি এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীও স্থিতিশীল ও লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ পান।