এশিয়ার প্রধান শেয়ারবাজারের সূচকগুলো গতকাল বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এ সতর্কতার প্রধান কারণ। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল ও ডলারের বিনিময় হার কিছুটা কমেছে। এর প্রভাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সূচকগুলো কিছুটা নিম্নমুখী ছিল।
তবে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের মূল সূচক এমএসসিআই অল কান্ট্রি ইনডেক্স সামান্য ০.১ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি অবস্থান করেছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এশিয়ার বিনিয়োগকারীরা গতকাল ঝুঁকি নিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। জাপান ও তাইওয়ানের শেয়ারবাজার সূচক দিনভর লেনদেনের এক পর্যায়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। চীনের সাংহাই এসই কম্পোজিট ইনডেক্স প্রায় ০.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক কিছুটা কমেছে। স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও এসকে হাইনিক্সের শেয়ারের বড় দরপতন এর কারণ। যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে সম্ভাব্য নতুন শুল্ক আরোপও বিনিয়োগকারীদের বিক্রির সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। ইউরোপে জার্মানির ডিএএক্স সূচক ০.৩ শতাংশ ও ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচকে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক ফিউচারস সূচক সামান্য কমলেও এখনও রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছি। ওয়াল স্ট্রিটের কোম্পানিগুলোর আয় আশাব্যঞ্জক; এসঅ্যান্ডপি ৫০০ অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির আয় গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে প্রধান প্রভাবক ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত শান্তি আলোচনার ফলাফলের প্রত্যাশা ও ফেডের নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত আশঙ্কা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক বাংলাদেশ সময় গতকাল দিবাগত রাত ১২টায় ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়েছে। কোনো চূড়ান্ত ফলাফল না আসলেও ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, তিনি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তি চান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা মুদ্রাবাজারে ঝুঁকি কমিয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে আগ্রহী হন। ফলে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও ডলারের বিনিময় হারে চাপ পড়েছে। আগামী ২১-২৩ আগস্ট কানসাস সিটি ফেডারেল রিজার্ভের জ্যাকসন হোল সিম্পোজিয়াম নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় প্রত্যাশা রয়েছে। ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি নিয়ে বক্তব্য দেবেন।
এক জরিপ অনুযায়ী, আগামী মাসে ফেডের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা প্রায় ৮৫ শতাংশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সূচক মিশ্র সংকেত দিচ্ছে—পাইকারি মূল্য ও খুচরা বিক্রি বাড়লেও শিল্প উৎপাদন সংকুচিত এবং ভোক্তাদের মনোভাব কিছুটা নেতিবাচক। জুলিয়াস বায়ারের এশিয়াবিষয়ক গবেষণা প্রধান মার্ক ম্যাথিউস মনে করেন, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে তিনবার সুদহার কমানো হতে পারে। এটি ঘটলে শেয়ারবাজারের উত্থান আরও দ্রুত হবে।
ফেডের সুদহার কমানোর সম্ভাবনার কারণে স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ও বড় বাজেট ঘাটতির কারণে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ওপর চাপ বাড়েছে। এর প্রভাবে বন্ডের ইল্ড কার্ভ ২০২১ সালের পর সবচেয়ে খাড়া অবস্থানে। ইউরোপেও বন্ড ইল্ডের চাপ বাড়ছে, যেখানে সরকারগুলো সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানোর জন্য ঋণ নিতে পারে।