রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় বিকল্প উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বিদেশি অর্থায়ন শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে সীমাবদ্ধ নয়, পুঁজিবাজারেও বড় সুযোগ রয়েছে।
গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার: ড্রাইভিং ডেভেলপমেন্ট উইথ মার্কেটস, ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গভর্নর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তখন জিডিপির ১২-১৪ শতাংশ বিদেশি সহায়তা পেতাম। এখন সেই হার অনেক কমে গেছে। তাই আমাদের নিজস্ব অর্থ জোগাড় করতে হবে এবং সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এটি সম্পূর্ণ সম্ভব।”
রাজস্ব আহরণে ঘাটতির প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশ এ খাতে ভালো করতে পারছে না। আরো মনোযোগ দরকার। সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের ধর্মঘটের নেতিবাচক প্রভাব আমরা দেখেছি। তারা মূলত তাদের বিদ্যমান সুবিধা বজায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু এটি কোনো সমাধান নয়।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারত যদি জিডিপির ১৮-২০ শতাংশ, নেপাল ২০ শতাংশের বেশি রাজস্ব তুলতে পারে, তবে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?”
পুঁজিবাজার ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে গভর্নর আরো বলেন, “বিদেশি অর্থায়ন শুধু প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে সীমাবদ্ধ নয়। বেসরকারি খাতেও বিদেশি অর্থায়নের সুযোগ আছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কাজে লাগানোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সময় এসেছে উন্নয়ন সহযোগীর উপর নির্ভর না করে নিজস্ব বাজারভিত্তিক অর্থায়ন কাঠামো গড়ে তোলার। এখানে পুঁজিবাজার হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।”
তিনি আরো জানান, সরকার আর্থিক খাতের উন্নয়নে কয়েকটি অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, উদ্ভাবন ও আর্থিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে। গভর্নর বলেন, “দেশের উন্নয়ন এবং ব্যাংকিং খাতের নাজুক পরিস্থিতি আমরা সবাই জানি। ধাপে ধাপে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এটি স্থিতিশীল করতে চাই। বাস্তবায়নে তিন-চার বছর সময় লাগবে। তবে এটি সম্ভব এবং আমরা তা করব।”
ব্যাংকিং খাতের অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রসারণে তিনি বলেন, “ঋণ গ্রহণে স্বচ্ছতা বাড়ানো হচ্ছে। ব্যাংকবহির্ভূত জনগোষ্ঠীর কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও ব্যাংকিং সেবা পৌঁছেছে।” তিনি আরো জানান, “মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বিকাশের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।”
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বুধবার মূল সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন কমেছে। ডিএসই সূত্রে জানা যায়, প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৩১.৪৮ পয়েন্ট কমে ৫,৩৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ‘ডিএসইএস’ ১১.৯২ পয়েন্ট বেড়ে ১,১৭৭ পয়েন্টে এবং ‘ডিএস৩০’ ১৮.৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ২,০৮৬ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
মোট ৯৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১,০৩৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার। ৪০৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৪টির, কমেছে ২২৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫১টির।