বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারী, স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও ইস্যুয়ার কোম্পানির মধ্যে উদ্ভূত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দুটি নতুন বিধিমালা অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদিত বিধিমালার নাম হলো ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (সেটেলমেন্ট অব ডিসপিউট) রেগুলেশনস, ২০২৫’ এবং ‘চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সেটেলমেন্ট অব ডিসপিউট) রেগুলেশনস, ২০২৫’।
আজ (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত ৯৭৬তম কমিশন সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। নতুন এই বিধিমালার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় একটি কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় বিরোধ সমাধান হবে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে মেডিয়েশন বা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান, এবং দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োজনে আরবিট্রেশন বা নিরপেক্ষ সালিসির মাধ্যমে রায় প্রদান করা হবে।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, “এই রুলস বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগকারীর সঙ্গে স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও ইস্যুয়ার কোম্পানির বিরোধ দ্রুত সমাধান হবে। এতে আমাদের সার্ভেইল্যান্স বিভাগের ওপর চাপও কমবে।”
নতুন রেগুলেশন অনুযায়ী, কোনো বিনিয়োগকারীর সঙ্গে লেনদেনসংক্রান্ত বিরোধ দেখা দিলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন করতে হবে। এরপর স্টক এক্সচেঞ্জ মেডিয়েশন বোর্ড গঠন করবে, যারা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সমঝোতার চেষ্টা করবে। যদি মেডিয়েশন ব্যর্থ হয়, বিষয়টি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। এই ট্রাইব্যুনাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রায় প্রদান করবে, যা বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে। ফলে বিনিয়োগকারীকে আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না বা জটিল আইনি প্রক্রিয়া পাড়ি দিতে হবে না।
বিএসইসি কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। পূর্বে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত এবং অনেক ক্ষেত্রে বিএসইসির সার্ভেইল্যান্স বিভাগে জমে থাকত। এখন স্টক এক্সচেঞ্জ পর্যায়ে সমাধানের সুযোগ থাকায় প্রক্রিয়াটি হবে দ্রুত, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ফেলো ও অর্থনীতিবিদ হেলাল আহমেদ জনি বলেন, “এতে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর নির্ভরতা কমবে। একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউসগুলোও বিনিয়োগকারীর প্রতি আরও দায়বদ্ধ থাকবে।”