দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রবিবার (১২ অক্টোবর) ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ শেয়ারের দাম কমে যায়। যে সংখ্যক শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার চেয়ে সাত গুণ বেশি সিকিউরিটিজের দরপতন হয়েছে। ফলে একদিনেই সব সূচক প্রায় ২ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নেমে আসে।
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স তিন মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। যদিও সামান্য বেড়েছে মোট লেনদেনের পরিমাণ।
ডিএসইর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবিবার মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ৩১১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টির। দর কমা সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৭৫টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৭০টি এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৬৬টি শেয়ার রয়েছে।
বাজার পতনের ফলে ডিএসইএক্স সূচক ৮১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০২ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস কমেছে ১৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭২ শতাংশ, অবস্থান এখন ১ হাজার ১১৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই–৩০ সূচক, যা ৩০টি শীর্ষ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গঠিত, তা ৩৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে ২ হাজার ৩৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
বাজার পতনের কারণ
মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশেকুর রহমান বলেন, “এ মুহূর্তে বাজারে বড় কারেকশনের মূল কারণ হলো পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত। সরকার এই ব্যাংকগুলোতে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন দেবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যার প্রভাব পুঁজিবাজারেও পড়ছে।”
তিনি আরও জানান, “পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। এতে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করছে। পাশাপাশি, জুন ক্লোজিংয়ে অনেক কোম্পানি ভালো মুনাফা দেখাতে পারেনি। তাই ওইসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারেও বিক্রির চাপ বেড়েছে।”
রবিবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি পিএলসি-র শেয়ারে। কোম্পানিটির মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও দরপতন
একইদিন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)-ও দরপতন দেখা যায়। সব সূচক নিচে নেমেছে, লেনদেনও কমেছে।
সিএসইর সার্বিক সূচক সিএসপিআই ১৮৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচক ১১২ পয়েন্ট কমে নেমেছে ৯ হাজার ৭৭ পয়েন্টে।
রবিবার সিএসইতে মোট ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৩২টির দাম বেড়েছে, ১৪৭টির কমেছে, আর ১৫টির অপরিবর্তিত ছিল। মোট লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৩৯ লাখ টাকার।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ স্পষ্ট না করেই পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাজারে নেতিবাচক বার্তা গেছে। এটি পুরো বাজারকে নিচে টেনে আনছে।”
তিনি জানান, “আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছি, যাতে এই মার্জার প্রক্রিয়ায় ডিবিএকেও সম্পৃক্ত করা হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি বাজার শিগগিরই স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে।”