দীর্ঘ মন্দার পর দেশের পুঁজিবাজারে ফিরেছে নতুন প্রাণ। টানা নিম্নগতি কাটিয়ে গতকালের লেনদেন শেষে বিনিয়োগকারীদের মুখে ফুটেছে আশার হাসি। সূচক, লেনদেন এবং বেশিরভাগ খাতের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বাজারে ইতিবাচক সাড়া জাগিয়েছে।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ১,৬৪,৪৪৮টি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। এতে ১৭.৮৩ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়, যার আর্থিক মূল্য ৫৩০ কোটি টাকার বেশি।
সূচকগুলোর মধ্যে —
- ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৫.২৯ পয়েন্ট (দাঁড়িয়েছে ৫২২৭.৭৫ পয়েন্টে)
- ডিএসইএস বেড়েছে ২.৯৪ পয়েন্ট (দাঁড়িয়েছে ১১১৭.৭৪ পয়েন্টে)
- ডিএস৩০ বেড়েছে ১১.৪৪ পয়েন্ট (দাঁড়িয়েছে ২০০৯.৮৮ পয়েন্টে)
দিন শেষে ২২৮টি কোম্পানির শেয়ারমূল্য বেড়েছে, ১১৬টির কমেছে, আর ৫০টি অপরিবর্তিত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এই ভারসাম্যপূর্ণ লেনদেন বাজারে স্থিতিশীলতার বার্তা দিচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বীমা, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ও ব্যাংক খাতের দিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে বীমা খাত গতকালের সবচেয়ে বড় গেইনার হিসেবে উঠে এসেছে। একাধিক বীমা কোম্পানির শেয়ারমূল্য বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
বীমা ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল, ব্যাংক ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ভালো লেনদেন হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের ইতিবাচক নীতিগত পদক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর তদারকি বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনছে।
লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘A’ ক্যাটাগরির শেয়ারগুলো বাজারে আধিপত্য বজায় রেখেছে। এটি ইঙ্গিত দেয়, বিনিয়োগকারীরা এখন বেশি ঝুঁকছেন মানসম্মত ও স্বচ্ছ কোম্পানির শেয়ারের দিকে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উত্থান সাময়িক নয় বরং আস্থার পুনরুদ্ধারের স্পষ্ট ইঙ্গিত। তাদের ধারণা, নতুন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
একজন বাজার বিশ্লেষক বলেন,
“গতকালের সূচক ও লেনদেনের গতি দেখিয়ে দিচ্ছে— বাজার এখন টেকসই ঊর্ধ্বমুখী ধারার দিকে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আস্থা তৈরি হচ্ছে, সেটিই আগামী দিনের আসল শক্তি।”
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিনিয়োগকারীরা যেন এখন ধৈর্য ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তে এগিয়ে যান। তাদের মতে, বর্তমান ইতিবাচক ধারা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল ও টেকসই প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
গতকালের লেনদেন শুধু সংখ্যার গল্প নয়; এটি বিনিয়োগকারীদের মানসিক পরিবর্তন ও আস্থার প্রতিফলন। এই ধারাটি যদি অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার খুব শিগগিরই পেতে পারে এক নতুন জাগরণের দিন।