দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই বেসরকারি ব্যাংক — এনআরবি ব্যাংক পিএলসি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পিএলসি — ২০২৫ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর এই প্রতিবেদনেই দেখা যাচ্ছে, একদিকে এনআরবি ব্যাংক বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে, অন্যদিকে ইউসিবির মুনাফা কমে গেছে প্রায় ৭৮ শতাংশ।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগের দিন ব্যাংক দুটির পৃথক পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে প্রতিবেদনগুলো অনুমোদন করা হয়।
এনআরবি ব্যাংক: আয় বাড়লেও লোকসানে ডুবে ব্যাংকটি
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে এনআরবি ব্যাংকের নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অথচ গত বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ১৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা করেছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থায় নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে।
এই সময়ে ব্যাংকটির সুদ বাবদ আয় কিছুটা বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকের সুদ আয় দাঁড়ায় ৫২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের ৫০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেয়ে ২৩ কোটি ৩০ লাখ বেশি। কিন্তু আয় বৃদ্ধির সত্ত্বেও খরচ, অনাদায়ী ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক দায়ের চাপে ব্যাংকটি বড় লোকসানে পড়ে।
শুধু জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির লোকসান হয়েছে ৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই প্রান্তিকে এনআরবি ব্যাংক ৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল।
ইউসিবি ব্যাংক: আয় বেড়েছে, কিন্তু মুনাফা কমেছে প্রবলভাবে
অন্যদিকে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সুদ আয় বেড়েছে, কিন্তু মুনাফা কমে গেছে ব্যাপকভাবে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকটির সুদ বাবদ আয় হয়েছে ৪,৭০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের ৪,১৯৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার তুলনায় প্রায় ৫১০ কোটি বেশি—বৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
তবুও এই সময়ের মধ্যে ইউসিবির নিট মুনাফা কমে গেছে ১৭৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, অর্থাৎ ৭৮ দশমিক ৩২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৪৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ২২৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ইউসিবির সুদ আয় হয়েছে ১,৬৩৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা আগের বছরের ১,৬১২ কোটি ২৩ লাখ টাকার তুলনায় সামান্য বেশি। তবে এই সময়ের নিট মুনাফা নেমে এসেছে ৩২ কোটি ২ লাখ টাকায়—যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ৯৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
দুই ব্যাংকের সাম্প্রতিক আর্থিক ফলাফলে স্পষ্ট হচ্ছে, ব্যাংক খাত বর্তমানে চাপের মুখে রয়েছে। সুদ আয় বাড়লেও ঋণ পুনরুদ্ধারে সমস্যা, উচ্চ খরচ এবং অনাদায়ী ঋণের বোঝা মুনাফাকে টেনে নিচে নামাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে ব্যাংক খাতে লাভজনকতার চিত্র আরও ম্লান হতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যেখানে আমানত সংগ্রহে প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং খেলাপি ঋণের চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে এনআরবি ব্যাংক ও ইউসিবির এই আর্থিক প্রতিবেদন শিল্পের জন্য এক ধরনের সতর্ক সংকেত বয়ে এনেছে।