ভারতের প্রাচীনতম শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আজ, ২০ অক্টোবর, শেষ দীপাবলি ও কালীপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা আইনি জটিলতার পর এক্সচেঞ্জটি এখন স্বেচ্ছায় কার্যক্রম বন্ধ করার পথে। খবরটি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
২০১৩ সালের এপ্রিলে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি নিয়ম না মানার অভিযোগে সিএসইতে শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে। এরপর এক্সচেঞ্জটি আদালতে নানা আইনি লড়াই চালালেও পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অবশেষে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিএসইয়ের চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বোস জানান, স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবসা থেকে বের হওয়ার বিষয়ে ২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে জরুরি সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন পাওয়া গেছে। এরপর তারা সেবির কাছে আবেদন জমা দিয়েছে। বর্তমানে সেবি এক্সচেঞ্জের সম্পদের মূল্যায়নের জন্য একটি সংস্থা নিযুক্ত করেছে এবং প্রক্রিয়া চলছে।
সেবি অনুমোদন দিলে এক্সচেঞ্জটি হোল্ডিং কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিএসই ক্যাপিটাল মার্কেটস প্রাইভেট লিমিটেড (সিসিএমপিএল) এনএসই ও বিএসইতে ব্রোকারেজ ব্যবসা চালাবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিএসইর তিন একর ইএম বাইপাস সম্পত্তি সৃজন গ্রুপের কাছে ২৫৩ কোটি টাকায় বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে, যা সেবির অনুমোদনের পর কার্যকর হবে।
শতবর্ষের উত্তরাধিকার ও পতনের ইতিহাস:
কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ ১৯০৮ সালে যাত্রা শুরু করে। বহু বছর ধরে ছোট ও মাঝারি শিল্পের শেয়ার লেনদেনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একসময় বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ছিল এবং কলকাতার অর্থনৈতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু ১২০ কোটি টাকার কেতন পারেখ কেলেঙ্কারির পর এক্সচেঞ্জের পতন শুরু হয়। বহু ব্রোকার লেনদেন নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয় এবং এক্সচেঞ্জ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞ স্টকব্রোকার সিদ্ধার্থ থিরানি স্মরণ করেন, ৯০-এর দশকের লায়ন্স রেঞ্জে প্রতিদিন মা লক্ষ্মীর পূজা দিয়ে ট্রেডিং শুরু হতো। ২০১৩ সালের এপ্রিলে সেবি লেনদেন স্থগিত করলে সব থেমে যায়। এবারের দীপাবলি যেন সেই ঐতিহ্যকে বিদায় জানানোর আয়োজন।
আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি:
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সিএসই বোর্ড কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলা প্রত্যাহার করে স্বেচ্ছা প্রস্থান প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে সেবির কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেয় এক্সচেঞ্জটি। ২৫ এপ্রিল শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন পাওয়া যায়। সেবি বর্তমানে রাজবংশী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস সংস্থাকে মূল্যায়নের দায়িত্ব দিয়েছে। মূল্যায়ন শেষ হলেই প্রস্থান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রতিবেদনে বোস উল্লেখ করেন, সিএসই ভারতের মূলধন বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে এখানে ১,৭৪৯টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ৬৫০ জন নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে। বোস নিজে এ সময়ে ৫.৯ লাখ রুপি পরিচালক ফি পেয়েছেন। প্রস্থান প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এক্সচেঞ্জটি কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছা অবসর ঘোষণা করেছে। এতে ২০.৯৫ কোটি রুপি এককালীন প্রদান ও বছরে প্রায় ১০ কোটি রুপি সাশ্রয় হবে। সকল কর্মী এই পরিকল্পনায় অংশ নেন। তবে কয়েকজনকে চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত কাজে রাখা হয়েছে। ১০০ বছরের ইতিহাস গড়ে তোলা কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ এবার এক যুগের আইনি জটিলতা ও পতনের পর শেষ দীপাবলি উদযাপন করতে যাচ্ছে।