পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগ শিক্ষায় দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাঠ প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগ শিক্ষা ও আর্থিক সাক্ষরতা কার্যক্রমের বিস্তারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিএসইসির সুপারিশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রতি পাঁচটি নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।
উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো—পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে মানুষকে শিক্ষিত করা, সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং ভ্রান্ত সিদ্ধান্তজনিত ঝুঁকি কমানো। বিএসইসি মনে করে, প্রশাসনিক কাঠামো যুক্ত করলে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।
বিএসইসির অনুরোধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি চিঠি পাঠায়। এর ভিত্তিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা ৮ অক্টোবর সব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানায়। চিঠির অনুলিপি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা তথ্য কর্মকর্তাদেরও পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের সব পর্যায়ে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
পাঁচ নির্দেশনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
-
জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে লিঙ্ক সংযুক্তকরণ: প্রতিটি জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে ‘ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি ও বিনিয়োগ সচেতনতা’ শীর্ষক একটি লিঙ্ক যুক্ত করতে বলা হয়েছে। এতে বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেল সংযুক্ত থাকবে।
-
স্থানীয় কর্মশালা ও সেমিনারে সহায়তা: জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএসইসি আয়োজিত ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি সেমিনার, কর্মশালা বা প্রশিক্ষণে প্রশাসনের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
-
মাসিক সমন্বয় সভায় অন্তর্ভুক্তি: প্রতিটি জেলার মাসিক সমন্বয় সভায় ‘বিনিয়োগ শিক্ষা ও নিরাপদ বিনিয়োগ’ বিষয়টি নিয়মিত আলোচনার অংশ হবে।
-
জেলা তথ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রচারণা: বিনিয়োগ শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জেলা তথ্য অফিসের সহায়তায় প্রচার-প্রকাশনার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
-
প্রশাসনিক শাখার দায়িত্ব নির্ধারণ: প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার (ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ) বা সিনিয়র সহকারী কমিশনারকে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি জাতীয় তথ্য বাতায়নে বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষাবিষয়ক ওয়েবসাইট ও ইউটিউব লিঙ্ক সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকরা সহজেই বিনিয়োগসংক্রান্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে প্রবেশাধিকার পাবেন। বিএসইসির মতে, ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষও পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে পারবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, “জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করলে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম সারা দেশে নতুন গতি পাবে। বিনিয়োগে ঝুঁকি কমাতে এবং জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রশাসনের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগ শিক্ষা শুধু বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার শর্ত। আমরা চাই দেশের প্রতিটি মানুষ বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতন হোক।”
গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণা ফেলো ও অর্থনীতিবিদ হেলাল আহমেদ জনি বলেন, “প্রশাসন, বিনিয়োগকারী, গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত অংশগ্রহণেই গড়ে উঠতে পারে একটি সচেতন বিনিয়োগ সংস্কৃতি, যা দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাবে। তবে মাঠপর্যায়ে কার্যকর করতে প্রশাসনের প্রশিক্ষণ, বাজেট ও মনিটরিং ব্যবস্থার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু নির্দেশনা নয়, বাস্তবায়নে ধারাবাহিক ফলোআপ ও প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে।”