বিধিবহির্ভূতভাবে পদ্মা প্রিন্টার্সে বিনিয়োগ এবং পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটিতে উন্নীত করার বিষয়টি অনুমোদনের ঘটনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামকে আজীবন পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ করেছে।
বিএসইসি খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৭৮তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় এও ঠিক করা হয় যে, সিকিউরিটিজ-সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে নিট দায় ও পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকা দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করায় ছয়টি ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের নিয়োগ বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এলআর গ্লোবাল ছয়টি ফান্ড পরিচালনা করে। এগুলো হলো:
- এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান
- এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান
- এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড
- এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড
- ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড
- গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডগুলো থেকে ২৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেডের ৫১ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু সে সময় কোম্পানির কোনো কার্যক্রম ছিল না। শেয়ার প্রতি নিট দায় ছিল ২ টাকা ৭৪ পয়সা এবং পুঞ্জীভূত লোকসান ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বিনিয়োগের আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওটিসি প্ল্যাটফর্মে শেয়ার দর ছিল ১৩ টাকা ৬০ পয়সা। পরে ছয়টি ফান্ডের মনোনীত পরিচালকের মাধ্যমে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড করা হয়। একই সঙ্গে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৫০ কোটিতে উন্নীত করা হয়। এ সময়ে ছয়টি ফান্ড থেকে মোট ৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হলেও পুরনো বিনিয়োগকারীদের কোনো ইউনিট দেয়া হয়নি। কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করা হয়নি এবং প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যুকৃত শেয়ার লকইন করা হয়নি। ফলে মোট ৬৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হয়।
এ ঘটনায় কোয়েস্ট বিডিসির তৎকালীন পরিচালক রিয়াজ ইসলাম, রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসান (অব.), মদিনা আলী, সৈয়দ কামরুল হুদা এবং মো. ওমর শোয়েব চৌধুরীকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়। কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগকৃত অর্থ ফান্ডগুলোর বিনিয়োগের অনুপাতে ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত আনতে হবে। সময়মতো অর্থ ফেরত না আনলে রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি, পরিচালক জর্জ এম স্টককে ১ কোটি এবং রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।
ছয়টি ফান্ডের যথাযথ তদারকি ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিজিআইসি) ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। মিথ্যা তথ্য প্রদানের দায়ে কোয়েস্ট বিডিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান সোহাগকে আরও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
২০২২-২৩ হিসাব বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যথাযথ পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতায় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান শফিক বসাক অ্যান্ড কোংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে প্রেরণ করা হয়। একই সময়ে সোনালী সিকিউরিটিজ লিমিটেড, কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ডের তৎকালীন পরিচালক হিসেবে থাকা শরীফ আহসানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
কোয়েস্ট বিডিসি থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডে ২৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। শেয়ার মূল্যায়ন করা হয় সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডের মাধ্যমে। তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদ হোসাইন এবং এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের যোগসাজশে শেয়ার মূল্যায়ন করা হয়। বিষয়টি মানি লন্ডারিংয়ের লক্ষণ হিসেবে ধরা পড়ায় দুদকে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিকিউরিটিজ কমিশন সভায় স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের বোর্ড অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী নেগেটিভ ইকুইটি ও আনরিয়েলাইজড লস সমন্বয় ও প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ক্ষেত্রে ৩১ ডিসেম্বর ২০৩০ এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে ৩১ ডিসেম্বর ২০৩২ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে কিছুটা শিথিলতা দেয়া হবে নিট সম্পদের ঘাটতির ক্ষেত্রে।

