দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে যেগুলোর তুলনায় কমেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। ফলে বাজার মূলধন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। মূল্যসূচকও হ্রাস পেয়েছে, তবে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৭টির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৩৬টির দাম কমেছে। আর ১৭৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪৫.৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে।
আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহামেদ বলেন, “গত সপ্তাহে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ফেরেনি। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে, তবে লেনদেনের পরিমাণ এখনো আশানুরূপ নয়। মূলত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বাজারে প্রভাব ফেলছে।” তিনি আরও বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষমাণ অবস্থায় আছেন। সরকারি নীতিগত দিকনির্দেশনা ও সুদের হারের স্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান। যদি আগামী সপ্তাহে ব্যাংক খাত ও আর্থিক খাতে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়, সূচক ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।”
গত সপ্তাহের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এটি ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা বা ০.৮২ শতাংশ। এর আগে বাজার মূলধন সপ্তাহে বেড়েছিল ৬ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। দুই সপ্তাহ আগে তা কমেছিল যথাক্রমে ১৭ হাজার ৮৪১ কোটি ও ৭ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ২৫ হাজার কোটি টাকা কমার পর ডিএসইর বাজার মূলধন গত সপ্তাহে ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
বাজার মূলধনের হ্রাসের পাশাপাশি ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকও কমেছে। ডিএসই এক্সচেঞ্জ সূচক (ডিএসইএক্স) গত সপ্তাহে ২৭.৬৭ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমেছে। এর আগে সূচকটি বেড়ে ৩০.৪৭ পয়েন্ট বা ০.৬০ শতাংশ হয়েছিল। তার আগের দুই সপ্তাহে ডিএসইএক্স যথাক্রমে ১৬৪.৩০ পয়েন্ট বা ৩.১১ শতাংশ ও ১৩২.০৭ পয়েন্ট বা ২.৪৪ শতাংশ কমেছিল। ইসলামী শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে ৫.৯২ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমেছে। এর আগে সূচকটি বেড়ে ২.২৬ পয়েন্ট বা ০.২১ শতাংশ হয়েছিল। তার আগের দুই সপ্তাহে সূচক যথাক্রমে ৪৭.৯৮ পয়েন্ট বা ৪.২৩ শতাংশ এবং ৩৭.৭১ পয়েন্ট বা ৩.২২ শতাংশ কমেছিল।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও ১০.৩৪ পয়েন্ট বা ০.৫২ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়ে ৩০.১৮ পয়েন্ট বা ১.৫৩ শতাংশ হয়েছিল। তার আগের দুই সপ্তাহে সূচক কমেছিল যথাক্রমে ৬৫.১২ পয়েন্ট বা ৩.২০ শতাংশ এবং ৪৮.৮০ পয়েন্ট বা ২.৩৪ শতাংশ। ডিএসইতে লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন ছিল ৪২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা ৬.৯৩ শতাংশ।
লেনদেনে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দিয়ে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫.২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার, প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে ব্র্যাক ব্যাংক, প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেন ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, রবি, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, সামিট এলায়েন্স পোর্ট, সিটি ব্যাংক এবং সোনালী পেপার।

