দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল ব্যবসায় বড় লোকসান করেছে। চলতি অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটির পরিচালন লোকসান ৪৯ কোটি টাকার বেশি। তবে অপরিচালন খাত থেকে সুদ ও বন্ড বিনিয়োগসহ স্থায়ী আমানত থেকে লাভ পাওয়ায় সামান্য মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
আজ রোববার (২ নভেম্বর) ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় আলোচিত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে লেনদেন প্রায় ২৬ শতাংশ কমেছে। আলোচিত সময়ে প্রতিদিন গড় লেনদেন ছিল ৪৭২ কোটি টাকা, আগের বছরে যা ছিল ৬২২ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ একদিনের লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১০ কোটি টাকা এবং সর্বনিম্ন লেনদেন ১৫৯ কোটি টাকা।
ডিএসই সাধারণত লেনদেন ফি, তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে চার্জ, ডেটা বিক্রয়, লাইসেন্সিং ফি এবং প্রশিক্ষণ একাডেমির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু লেনদেনে বড় ভাটার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় কমে মাত্র ১০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগের অর্থবছরে এটি ছিল ১২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে রাজস্ব কমেছে ২৭ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ।
পরিচালন খাতে লোকসান বেড়েছে ২৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে পরিচালন লোকসান ছিল ২১ কোটি টাকা। এই হিসাবে লোকসান বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ। অপরিচালন খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এফডিআরের সুদ ও বন্ড বিনিয়োগ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা এবং ভবন ভাড়া থেকে ১০ কোটি টাকা এসেছে। এ কারণে এক্সচেঞ্জটি ৩৩ কোটি টাকার নিট মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আগের অর্থবছরে নিট মুনাফা ছিল ৬১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৪৭ শতাংশ।
শুধু সর্বশেষ অর্থবছর নয়, ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ডিএসইর মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও এক্সচেঞ্জের নিট মুনাফা ছিল ১২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পরের বছর এটি কমে ৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা হয়েছে। সর্বশেষ দুই বছরে মুনাফা আরও কমেছে।
ডিএসইর একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে বদলীর কারণে দেশের পুঁজিবাজার একটি অস্থির বছর অতিক্রম করেছে। পুরো অর্থবছর জুড়ে লেনদেন কমায় মূল ব্যবসায় বড় ভাটা পড়েছে। শেয়ার লেনদেন ফি থেকেই মূল আয়ের বড় অংশ আসে। ফলে মুনাফাও কমেছে।”
এদিকে, সামান্য মুনাফার কারণে ডিএসই ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। মোট ১৮০ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ারের বিপরীতে ৩৬ কোটি ৮ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে।

