টানা ষষ্ঠ দিনে পতনের মুখে ছিল দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসে দর হারানোর পর গত বৃহস্পতিবার শেষ ঘণ্টায় ঊর্ধ্বমুখী আশা দেখা দিয়েছিল কিন্তু রোববার তালিকাভুক্ত প্রায় ৮৪ শতাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে।
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৮ পয়েন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ কমে ৪৮৯৯ পয়েন্টে নেমেছে। ফলে সূচকটি ফিরে গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে অবস্থায়। ডিএসইতে গতকাল তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ৩৫১টির লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩০১টির দর কমেছে, বেড়েছে ৩৩টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৭টির। মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও একই ধারা দেখা গেছে। ৩৭টি মেয়াদি ফান্ডের মধ্যে একটিরও দর বাড়েনি, ২৫টির দর কমেছে।
ব্রোকারদের মতে, জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। নীতিনির্ধারকরা বাজারের গুরুত্বের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রভাব কম। এছাড়া পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণে শেয়ার শূন্য ঘোষণা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি বিষয় বিনিয়োগকারীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। এগুলো হলো – নতুন মার্জিন বিধিমালা, পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ এবং জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা। মার্জিন বিধিমালা নিয়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে বৃহস্পতিবার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে।
কিন্তু পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ বিনিয়োগকারীদের মনপছন্দ হয়নি। তিনি জানান, শুধু এই পাঁচ ব্যাংক নয়, অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি রুগ্ণ অবস্থায়। শোনা যাচ্ছে, অনেককেই অবসায়ন বা একীভূত করা হতে পারে। এই ভয়ে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে, যার প্রভাব সূচকের পতনে দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদেশি ও দেশীয় বড় বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বড় বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চিত পরিস্থিতি পছন্দ করেন না, তাই তারা ক্রয় কমিয়ে দেন। ফলে দর পতনের চাপ বাড়ে।
গতকালের লেনদেনে দেখা গেছে, শুরুতে অধিকাংশ শেয়ারের দর বাড়লেও শেষ সময়ে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩২৯টির দর বেড়েছিল, তবে লেনদেনের শেষ দিকে ৩৭৩টির দর কমেছে। সকাল ১০টায় সূচক ৫০০১ পয়েন্ট ছাড়লেও দুপুর ২টা ২০ মিনিটের আগে ৪৮৯৭ পয়েন্টে নেমেছে।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬৮ পয়েন্টের পতনের মধ্যে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের অবদান ৩৭ পয়েন্ট। ব্যাংক খাতের দর পতনে সূচক হারিয়েছে ২২ পয়েন্ট, বীমায় প্রায় ১২ পয়েন্ট। একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের লেনদেন স্থগিত থাকায় তার প্রভাব নেই।
কাগজ ও ছাপাখানা খাতের ছয় কোম্পানির গড়ে দর পতন প্রায় পৌনে ৮ শতাংশ, যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ। সিরামিক খাতের দর কমেছে সোয়া ৫ শতাংশ। বীমার ৫৮টি কোম্পানির গড়ে দর কমেছে ৪.৬৫ শতাংশ। গতকাল লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ১৭ কোটি টাকা কমে ৪০২ কোটি টাকায় হয়েছে। একক খাত হিসেবে প্রকৌশল খাতের লেনদেন সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৫৮ কোটি টাকা বা ১৪.৫ শতাংশ। কোম্পানি হিসেবে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি টাকায়।

