২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯টি কোম্পানি শুধুমাত্র সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বড় অংশীদারি থাকা সত্ত্বেও এবারের লভ্যাংশ থেকে তাঁরা নিজস্ব অংশ নেবেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বাজারে আস্থা ধরে রাখতে এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে অনেকের ধারণা, কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পরিচালকদের লভ্যাংশ না নেওয়ার পেছনে অন্যান্য সুবিধা ভোগের বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে।
বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে নানা সুবিধা ভোগ করেন। গৃহস্থালি খরচ, বাজার, কর্মচারী বা উপ-প্রশাসনিক বেতনসহ নানা ব্যয় প্রতিষ্ঠান বহন করে থাকে। ফলে লভ্যাংশ না নেওয়া তাঁদের জন্য বড় ত্যাগ নয়; অন্য সুবিধা থেকেই তা পূরণ হয়।
ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “বাধ্যবাধকতা না থাকলে অনেক কোম্পানি হয়তো নগদ লভ্যাংশই দিত না। শুধু বোনাস শেয়ার দিয়ে ক্যাটাগরি বজায় রাখার চেষ্টা করত। বর্তমানে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণায় কঠোরতা রয়েছে। কৃত্রিমভাবে মুনাফা বাড়িয়ে বোনাস দেওয়া যায়, কিন্তু নগদ দেওয়ার সুযোগ কম। এ কারণেই অনেক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।”
এক কোম্পানির সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনেক কোম্পানির মালিকপক্ষ নিজেই শেয়ারের ব্যবসা করেন। বাস্তবে মুনাফা কম হলেও আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির সময় তা বেশি দেখানো হয়। হিসাব অনুযায়ী লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও বাস্তবে তা থাকে না। তাই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশ পান।”
শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ:
-
ওরিয়ন ইনফিউশন: ১ টাকা ৭১ পয়সার ইপিএসের বিপরীতে ২০ শতাংশ বা ২ টাকা লভ্যাংশ। বাকি টাকা রিজার্ভ থেকে দেওয়া হবে।
-
সোনালি লাইফ: ইপিএস ১ টাকা ৭৩ পয়সা; লভ্যাংশ ১৫ শতাংশ বা ১ টাকা ৫০ পয়সা।
-
নাভানা ফার্মা: ইপিএস ৪.৫ টাকা; লভ্যাংশ ১৪ শতাংশ বা ১ টাকা ৪০ পয়সা।
-
ফাইন ফুডস: ইপিএস ৪.১৮ টাকা; লভ্যাংশ ১৪ শতাংশ বা ১ টাকা ৪০ পয়সা।
-
এমকে ফুটওয়্যার: ইপিএস ১.৮৩ টাকা; লভ্যাংশ ১২ শতাংশ বা ১ টাকা ২০ পয়সা।
মোট ৩৪টি কোম্পানি কেবল সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “লভ্যাংশ ঘোষণার এখতিয়ার কোম্পানির নিজের। আইনের লঙ্ঘন না হলে এবং বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হস্তক্ষেপ করে না।”

