বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার সংখ্যা সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমেছে। তবে একই সময়ে র্যানসমওয়্যার হামলা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। সাইবারসিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান চেকপয়েন্টের সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
চেকপয়েন্ট জানায়, নতুন প্রযুক্তি, লক্ষ্যবস্তুর পরিবর্তন এবং জেনারেটিভ এআই-ভিত্তিক হুমকির দ্রুত বিস্তার সাইবার নিরাপত্তা জগতকে আরও জটিল ও গতিশীল করে তুলেছে। সেপ্টেম্বরে বিশ্বজুড়ে ৫৬২টি র্যানসমওয়্যার হামলা নথিভুক্ত হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো উত্তর আমেরিকা।
গবেষণায় দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় দুই হাজার সাইবার হামলার মুখোমুখি হয়েছে— যা আগের মাসের তুলনায় ৪ শতাংশ কম।
এ তালিকায় সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল শিক্ষা খাত। বিশ্বজুড়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৪১৭৫টি হামলার শিকার হয়েছে। যদিও সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ কম, তবুও অন্যান্য খাতের তুলনায় এটি সবচেয়ে বেশি।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে টেলিকম খাত, যেখানে প্রতি সপ্তাহে ২৭০৩টি হামলা হয়েছে।
তৃতীয় স্থানে আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলো প্রতি সপ্তাহে ২৫১২টি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সেবানির্ভর খাতগুলো এখনো হ্যাকারদের মূল টার্গেট। এসব খাতে ডিজিটাল সিস্টেম ও ডাটার ওপর নির্ভরশীলতা বেশি হওয়ায় ঝুঁকিও তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে যেখানে হাইব্রিড কাজের পরিবেশ, ক্লাউড সেবা এবং পুরনো সিস্টেম একসঙ্গে চলছে— সেখানে হামলার সুযোগ অনেক বেশি থাকে।
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি সাইবার আক্রমণের শিকার আফ্রিকা। মহাদেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় তিন হাজার হামলা হয়েছে।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকা, যেখানে সাপ্তাহিক হামলার সংখ্যা ২৮২৬টি।
চেকপয়েন্টের মতে, বিভিন্ন কোম্পানির কাজের ধরনে জেনারেটিভ এআই (GenAI) টুল ব্যবহারের ফলে তথ্য ফাঁসের নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে বিশ্বজুড়ে প্রতি ৫৪টি GenAI প্রম্পটের মধ্যে একটিতে সংবেদনশীল তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা ছিল।
গবেষণায় আরও বলা হয়, GenAI টুল নিয়মিত ব্যবহার করা ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এআই ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বাড়লেও তা ডাটা সুরক্ষায় বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই এ প্রযুক্তি ব্যবহারে কঠোর নিয়মনীতি ও শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
র্যানসমওয়্যার এখনো সাইবার হামলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর। এ ধরনের আক্রমণে ভাইরাসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ফাইল বা সিস্টেম লক করে দেওয়া হয় এবং মুক্তির জন্য অর্থ দাবি করা হয়।
আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সফোস জানায়, বিশ্বজুড়ে র্যানসমওয়্যার হামলার অর্ধেকেরও বেশি ঘটনায় মুক্তিপণ আদায়ে সফল হয়েছে সাইবার অপরাধীরা।
গবেষকদের মতে, হামলাকারীরা এখন তাদের কার্যক্রম আরও আক্রমণাত্মক করছে। তারা কৌশল উন্নত করছে এবং বিভিন্ন খাতের দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছে।
তাদের পরামর্শ— শিক্ষা, উৎপাদন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর সাইবার নিরাপত্তা এখনই শক্তিশালী করা জরুরি।

