যুক্তরাজ্য কখনোই সহিংসতা এবং ভয় প্রদর্শনের জন্য জাতীয় পতাকা ব্যবহারকারী চরম-ডানপন্থিদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাতে সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় চরম-ডানপন্থি বিক্ষোভে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি এই মন্তব্য করেন।
শনিবার কেন্দ্রীয় লন্ডনে ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেন। সমাবেশের নেতৃত্ব দেন চরম-ডানপন্থি কর্মী টমি রবিনসন, যার আসল নাম স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন।
‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সমাবেশের পর স্টারমার বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ব্রিটিশ সমাজের মৌলিক মূল্যবোধ। তবে পুলিশ বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর হামলা এবং ভয় দেখানো অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, “মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার আছে। এটি আমাদের দেশের মূল্যবোধের মূল ভিত্তি। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ বা মানুষের রঙ বা পটভূমির কারণে ভীতি সৃষ্টি আমরা সহ্য করব না।”
স্টারমার আরও যোগ করেন, “যুক্তরাজ্য গর্বের সঙ্গে সহনশীলতা, বৈচিত্র্য ও সম্মানের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি দেশ। আমাদের পতাকা আমাদের বৈচিত্র্যময় দেশের প্রতীক। আমরা এটিকে তাদের কাছে কখনোই দেব না যারা সহিংসতা ও বিভেদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে।”
শনিবারের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী প্রতীক, হাতাহাতি এবং উস্কানিমূলক ভাষণ দেখা গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘোড়সওয়ার পুলিশকে বোতল ছোঁড়া হচ্ছে। রবিনসনের সমর্থকদের সরাতে এবং প্রায় ৫ হাজার পাল্টা বিক্ষোভকারীকে নিরাপদে হোয়াইটহল এলাকা থেকে বের করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
সমাবেশে চরম-ডানপন্থি ব্যক্তিত্বদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। রবিনসন উপস্থিতদের উদ্দেশে বলেন, “শুধু যুক্তরাজ্যই সমস্যায় নেই। প্রত্যেকটি পশ্চিমা দেশ একই সমস্যার মুখোমুখি।”
আন্তর্জাতিক বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ফরাসি রাজনীতিবিদ এরিক জেমুর, যিনি ‘গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উল্লেখ করে বলেন, “আমরা ইউরোপীয় জনগণকে দক্ষিণ ও মুসলিম সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ার মুখোমুখি।”
বেলজিয়ান চরম-ডানপন্থি রাজনীতিবিদ ফিলিপ ডিউইন্টার ঘোষণা করেন, “ইসলামই আমাদের মূল শত্রু। আমাদের ইসলাম থেকে মুক্ত হতে হবে। এটি ইউরোপ বা যুক্তরাজ্যের অংশ নয়।”
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ড্যানিশ পিপলস পার্টির নেতা মর্টেন মেসারশমিডট, জার্মান অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি এমপি পেত্র বাইস্ট্রন এবং পোলিশ রাজনীতিবিদ ডমিনিক তারজিনস্কি।
টেসলার প্রধান নির্বাহী ও এক্স-এর চেয়ারম্যান ইলোন মাস্ক ভিডিওকলে উপস্থিত হয়ে বলেন, যুক্তরাজ্যের ‘সরকারে জরুরি পরিবর্তন’ প্রয়োজন।
এই সমাবেশ এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন চরম-ডানপন্থি সহিংসতার ঢেউ যুক্তরাজ্যজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হোটেলগুলোতে অগ্নিসংযোগও ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বিদেশীভীতি এবং অনলাইন বিভ্রান্তি এই উস্কানির পেছনে রয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার ম্যাট টুইস্ট বলেন, “কর্মকর্তাদের উপর সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য। অনেকেই আইনগতভাবে প্রতিবাদের জন্য এসেছিলেন কিন্তু অনেকে শুধুমাত্র সহিংসতার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন।”
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদও বলেন, “যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে, তাদের আইন অনুযায়ী জবাবদিহি করতে হবে।”

