২০১৬ সালে নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে মীর আহমেদ বিন কাসেম হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) মীনাক্ষী গাঙ্গুলিকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কিত’ থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। পরে তাকে একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার গোপন বন্দীশালায় আট বছর ধরে আটক রাখা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি মুক্তি পান।
আদালতের পদক্ষেপ ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া:
বাংলাদেশে গুম, গোপনে আটক রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগে ২৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ এসেছে আন্তর্জাতিক নজরদারির পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই পদক্ষেপকে বহু বছর ধরে প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছে। সংস্থার মতে, এটি নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার ও সমাজের জন্য আংশিক স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, অভিযুক্তদের বিচার শুরু হলেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ এখনও থেকে গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করছে, পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এটি নিশ্চিত করতে আরও পদক্ষেপের দরকার আছে। সংস্থার এই প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও বিচার ব্যবস্থার প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছে। আদালতের এই পদক্ষেপ নিখোঁজ ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলেও, ন্যায়বিচারের পুরো প্রক্রিয়াকে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
অভিযুক্ত ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:
এই পদক্ষেপ এসেছে আন্তর্জাতিক নজরদারির প্রেক্ষাপটে, যেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আদালতের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিলের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই পদক্ষেপকে বহু প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচারের দিকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থার মতে, এটি নিখোঁজ ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও সমাজের জন্য আংশিক স্বস্তি নিয়ে এসেছে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, পুরো প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ এখনও একটি উদ্বেগের বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারি ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে বিচার কার্যকর ও মানবাধিকারের মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও ইতিহাস:
২০১৭ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে গোপনে আটক রাখা এবং গুমের ঘটনা ঘটছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তারা এই কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে এটিকে ‘অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি নিখোঁজ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের হাত থেকে পালানো অপরাধী, ঋণখেলাপি বা প্রতারক হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। সংস্থার মতে, সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করত বা মিথ্যা আশ্বাস দিত। সংস্থার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সরকারী পদে থাকা কর্মকর্তাদের অনেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
নীতি ও ক্ষমতার প্রভাব:
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময় কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সরকারী নীতি ও ক্ষমতার প্রয়োগে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সংস্থার মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে এসব কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সরকারি পদে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তারাও রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই সময়ে সরকারের নীতি সাধারণত অভিযোগ অস্বীকার, মিথ্যা আশ্বাস প্রদান এবং তদন্তের ব্যর্থতা কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। ফলে সাধারণ মানুষ, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা অত্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় পড়তেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, এই নীতি ও ক্ষমতার ব্যবহার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে এবং দেশে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার জোরালো প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা:
টানা তিন সপ্তাহের তীব্র বিক্ষোভের পর ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই আন্দোলনের সময় প্রায় ১,৪০০ জন প্রাণ হারান, যা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মানবিক ক্ষতির পরিমাণকে আরও বেড়ে দেয়। বিক্ষোভের সময় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় পড়ে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার পাশাপাশি গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। সংক্ষিপ্ত সময়ের এই রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের জনগণ, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার এবং মানবাধিকার সংস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এটি দেখিয়েছে, রাজনৈতিক সংকট ও কর্তৃত্ববাদী শাসন মানবাধিকার পরিস্থিতিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তদন্ত ও ন্যায়বিচারের অগ্রগতি:
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গুম সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করে। কমপক্ষে ১,৮৫০টি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়, যা গোপনে আটক রাখা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের ঘটনায় কেন্দ্রীয় প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আদালতে অভিযোগ ঘোষণা করার সময় উপস্থিত ছিলেন মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমানও, যিনি ২০১৬ সালে নিখোঁজ হওয়ার আগে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। পরে তাকে একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার গোপন বন্দীশালায় আট বছর ধরে আটক রাখা হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি মুক্তি পান।
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই পদক্ষেপকে বহু প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচারের দিকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থার মতে, এটি নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার ও সমাজের জন্য আংশিক স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, অভিযুক্তদের বিচার শুরু হলেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ এখনও রয়ে গেছে। সংস্থার মতে, পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আদালতের সহায়তায় অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হলেও, পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার নিশ্চয়তা এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করবে। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ এখনও থেকে গেছে।” সংস্থার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের বিচার শুরু হলেও পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার নিশ্চয়তা এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থা মনে করছে, দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক নজরদারি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এছাড়া, গুম ও গোপন বন্দী রাখার ঘটনা পুনরায় ঘটারোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এই পদক্ষেপগুলো না নিলে নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার, রাজনৈতিক বিরোধী এবং সাধারণ জনগণের সুরক্ষা ও মানবাধিকার ঝুঁকিতে থাকবে। সংস্থা মনে করছে, ভবিষ্যতে স্বচ্ছ বিচার এবং মানবাধিকারের মান বজায় রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বিতভাবে প্রয়োজন। বাংলাদেশে গুম, গোপনে আটক রাখা ও নির্যাতনের ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বড় পরীক্ষা। দীর্ঘ সময় তদন্ত ও ন্যায়বিচার না হওয়ায় নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার এবং সমাজে আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আদালতের পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক নজরদারি ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নির্দেশ করছে। অভিযুক্তদের বিচার শুরু হওয়া নিঃসন্দেহে বহু প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচারের জন্য সিগন্যাল। তবে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবাধিকার মান বজায় রাখা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তা স্পষ্ট – ভবিষ্যতে গুম এবং গোপন বন্দী রাখার পুনরাবৃত্তি রোধ করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এটি শুধু নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার নয়, সমগ্র সমাজের আস্থা ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকার রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা সরকারের জন্য এখন প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আদালত, সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত ও দৃঢ় পদক্ষেপ ছাড়া পুরো প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

