সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ কতটা ঘনিষ্ঠ, তা সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও আধ্যাত্মিকতার ওপর নির্ভর করে। ৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগের দিক থেকে উন্নত অবস্থানে রয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, নেপাল সবচেয়ে প্রকৃতিপ্রেমী দেশ, এরপর আসে ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাংলাদেশ।
রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে প্রকৃতিপ্রেমী ১০টি দেশ হলো:
১. নেপাল – ১.৩৯
২. ইরান – ১.২২
৩. দক্ষিণ আফ্রিকা – ১.২০
৪. বাংলাদেশ – ১.১৪
৫. নাইজেরিয়া – ১.১১
৬. চিলি – ০.৯৬
৭. ক্রোয়েশিয়া – ০.৯৪
৮. ঘানা – ০.৯২
৯. বুলগেরিয়া – ০.৮৮
১০. টিউনিসিয়া – ০.৮৬
গবেষকরা বলছেন, মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ শুধু বাইরে ঘুরে প্রকৃতি উপভোগ করা নয়; এটি আমাদের ভাবনা, অনুভূতি এবং জীবনের মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। অধ্যাপক মাইলস রিচার্ডসন, যিনি ডারবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি সংযোগ বিশেষজ্ঞ, বলেন, “যেসব সমাজে আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ব বেশি, সেখানে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকে। ধর্ম বা বিশ্বাসকে অর্থনীতি ও বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আগে গুরুত্ব দেওয়া সমাজে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ বেশি।”
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, শহরায়ণ, উচ্চ আয় এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের আধিক্য মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ কমিয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রকৃতি-ভিত্তিক কর্মকাণ্ডে মানুষের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেশি।
রিচার্ডসন বলেন, “আমাদের উচিত শহরের ভেতরেও প্রকৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করা, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক চিকিৎসায় প্রকৃতির ভূমিকা বাড়ানো, আইন ও নীতিতে প্রকৃতিকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির সঙ্গে প্রকৃতিকে সংযুক্ত করলে মানুষ প্রকৃতির প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে পারে।”
নরউইচের বিশপ গ্রাহাম উশারও বলেন, “প্রকৃতিতে সময় কাটানো শরীর, মন এবং আত্মার জন্য ভালো। যা আমরা লক্ষ্য করি, তা আমরা ভালোবাসি। যা ভালোবাসি, তা রক্ষা করতে চাই। শিশুদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর জন্য বনভোজন, ফোরেস্ট স্কুল এবং ওয়াইল্ড চার্চের মতো কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
গবেষণার ফলাফল থেকে স্পষ্ট: বাংলাদেশ এশিয়ার প্রকৃতিপ্রেমী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকলেও, আধুনিক জীবন, শহরায়ণ এবং প্রযুক্তির চাপ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে সীমিত করছে। তবে সচেতন উদ্যোগ ও নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে এই সংযোগ আরও গভীর করা সম্ভব।

