রাজধানীর শাহবাগ থানার চত্বরে আজ সোমবার সন্ধ্যায় একটি বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশে রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে শিগগিরই একটি রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। এ রূপরেখায় ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা, ‘ফ্যাসিস্ট’ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং নতুন সংবিধান রচনার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, “আমাদের বিপ্লব এখনও শেষ হয়নি। বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে বিপ্লব পূর্ণতা পাবে। আমরা মুজিববাদী রাজনীতির অবসান চাই। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদে যারা ইন্ধন দিয়েছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং ১৪ দলকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
ছাত্রলীগের নেতাদের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। পাশাপাশি ছাত্রলীগসহ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন তিনি।

গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে শাহবাগ থানায় একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৯১ জনের নাম উল্লেখ করে এই আবেদন করা হয়েছে। এজাহারে আরও ৮০০ থেকে ১০০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার এই আবেদনে শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করেন। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানসহ আরও ১৮টি হল কমিটির ছাত্রলীগ নেতাদেরও এজাহারে আসামি করা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, “এজাহারে অনেক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার দেশের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যারা আক্রান্ত হয়েছেন, আপনারা প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকার থানায় গিয়ে তথ্য-প্রমাণ সহ মামলা দায়ের করবেন। বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে হামলাকারী ও হত্যাকারীদের স্বাধীনভাবে নিশ্বাস নেওয়ার অধিকার নেই। তারা নিশ্বাস নেবে জেলহাজতে।”
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে কালবিলম্ব না করে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ছাত্রলীগ ফ্যাসিবাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে, তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ না হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে না।
সংবাদ সম্মেলনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে শেষ হয়।
মিছিলকালে আন্দোলনকারীরা ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘মুজিব লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ এবং ‘এক হয়েছে সারা দেশ, ছাত্রলীগের দিন শেষ’ স্লোগান দেয়।
মিছিলে অংশগ্রহণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “ছাত্রলীগ থাকবে কি না, তা নির্ধারণ হয়ে গেছে ১৫ জুলাইয়ের পরেই। ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন আর কখনোই হবে না।”
আন্দোলনের আরেক নেত্রী উমামা ফাতেমা বলেন, “ছাত্রলীগ গত ১৫ বছর ধরে যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছে, তা কোনোভাবেই ছাত্রসংগঠনের বৈধতা দেয় না। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি এবং তাদের রূপরেখা যে শুধু রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করবে তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তাদের প্রস্তাবিত নতুন সংবিধান এবং ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের মতো ইস্যু ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনো বিশ্লেষকদের মধ্যে জল্পনা রয়েছে।