বুধবার রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধ ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে যুক্ত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, গণরুমে নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরণের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এই অপরাধগুলোর অনেক প্রমাণ দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকা সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের সদস্যরা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী এবং জনগণের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে। এতে শতশত নিরপরাধ মানুষ হতাহত হয়েছেন। এছাড়া, আরও অনেক মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ও সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংগঠনটি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল বলে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।
এসব কারণেই সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংগঠনটিকে তফসিল-২ এ নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তটি দেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ছাত্রলীগের মতো প্রভাবশালী একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলতে পারে। তবে এটি স্পষ্ট যে, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।