বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পরিবেশগত সহযোগিতা জোরদার করতে নতুন একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজারবাইজানের বাকুতে কপ২৯ সম্মেলনের ফাঁকে জাপানের প্রতিনিধি কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাপানের পরিবেশমন্ত্রী কেইচিরো আসাও।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশের সংকট এবং জাপানের সম্ভাব্য সহযোগিতা-
বৈঠকে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যাগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, দেশের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ১০ শতাংশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্টি হয়। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার বেশিরভাগই অপরিশোধিত অবস্থায় জমা করা হয়। এ ধরনের ব্যবস্থাপনা থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত পুনঃউৎস আহরণ কেন্দ্র, ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্ল্যান্ট এবং স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি জাপানের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন।
জেসিএম প্রকল্প: টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা-
বৈঠকে যৌথ ক্রেডিটিং মেকানিজম (জেসিএম) নিয়ে আলোচনা হয়, যা কম কার্বন প্রযুক্তি বিস্তারে একটি কার্যকর পদ্ধতি। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে সই হওয়া জেসিএম চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দক্ষিণ-পশ্চিম ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্প, যা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাপানের সহায়তায় পরিচালিত।
জাপানের পরিবেশমন্ত্রী কেইচিরো আসাও বলেন, “বাংলাদেশের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাপান উদ্ভাবনী সমাধান ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের এনডিসি লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা আমাদের সহযোগিতা সম্প্রসারণে আগ্রহী।”
দুই পক্ষের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কার্বন ক্রেডিট নিয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে জাপানের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের পরিবেশগত সংকট নিরসনের প্রচেষ্টা একীভূত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়গুলো কপ২৯-এর প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাকে আরও একবার সামনে এনেছে। বাংলাদেশের জন্য এই উদ্যোগ শুধুমাত্র পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথ নয় বরং টেকসই অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হওয়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।