বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) মঙ্গলবার ৫০ পৃষ্ঠার একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবারও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য “সংকটজনক” পরিস্থিতি তৈরি করছে।
এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রতিশোধমূলক গ্রেপ্তার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, “স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে সহিংসতা চালানোর প্রবণতা” অবিলম্বে বন্ধ না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়াস বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ নির্বিচারে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দিচ্ছে, যা সাধারণ নাগরিকদের হয়রানির সুযোগ তৈরি করছে। এছাড়া, গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ অন্তর্বর্তী সরকারকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, র্যাবের বিরুদ্ধে বহু গুম, খুন এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তারা আরও বলেছে, অতীতের সরকারগুলো র্যাবকে নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং এর কাঠামোগত সংস্কার সম্ভব নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি ব্যবহার করেছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি চালানোর ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের “অরাজকতা দমনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের” নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এইচআরডব্লিউ পুলিশ ও বিচার বিভাগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের ওপর জোর দিয়েছে। তারা বলেছে, আইন সংশোধন করে ভিন্নমত দমনে মামলার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আটক ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারকের সামনে হাজির করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সাইবার নিরাপত্তা আইনের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আগের আইনটির মতোই নতুন অধ্যাদেশেও বাকস্বাধীনতা দমনকারী ধারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
প্রতিবেদনে বিগত সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া পরিচালক ইলেইন পিয়ার্স বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে টেকসই সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। অতীতের নিপীড়ন যেন ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করাই সরকারের অন্যতম বড় দায়িত্ব।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর ১৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ১৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
এইচআরডব্লিউ বলেছে, দেশের নাগরিকরা আরেকটি নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে তারা পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে নাও পারতে পারে। তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নিয়ে নিরাপত্তা, বিচার এবং অন্যান্য মৌলিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত সংস্কার নিশ্চিত করা করা প্রয়োজন।’